কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে আসছে গবাদিপশু

ডেস্ক রিপোর্ট : টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর মিয়ানমার থেকে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই দুইদিনে ১৫টি ট্রলারে প্রায় ১ হাজার ৬১৭টি গবাদিপশু আমদানি করা হয়েছে।

এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৯টি গরু ও ২৯৮টি মহিষ। এ নিয়ে চলতি মাসে প্রায় সাড়ে চার হাজার গবাদিপশু আমদানি হয়েছে। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

মিয়ানমার বাধা সৃষ্টি না করলে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে চাহিদা মেটাতে এবারও মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ গবাদিপশু আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শহীদুল ইসলাম, এমএ হাশেম, আব্দুল্লাহ মনির, মো. সোহেল, আবু ছৈয়দ, নুরুল আলম, আবদুর রাজ্জাক মেম্বারসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ৩৫-৪০ হাজার গবাদিপশু মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জানান, প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গত ২দিনে প্রায় ৬২০টি গবাদিপশু মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হয়েছে। এই ভাবে আমদানি অব্যাহত থাকলে বাজারে কোরবানির পশুর সংকট হবে না বলে মনে করেন তিনি।

টেকনাফ উপজেলা গবাদিপশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র আব্দুল্লাহ মনির জানান, গত সপ্তাহে প্রতি পশুতে হঠাৎ করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মূল্য কমিয়ে দেন এ দেশীয় পাইকার ব্যবসায়ীরা। ফলে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পশুতে ব্যাপক লোকসান গুণতে হয় সীমান্ত ব্যবসায়ীদের।

তিনি বলেন, তাই আরও লোকসানের ভয়ে পশু আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে আবার মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি শুরু হয়েছে।

টেকনাফ শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ২৫ মে টেকনাফের সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদীর পার্শ্বে একটি ক্যাডল করিডোর চালু করে। প্রতি গরু-মহিষ থেকে ৫০০ ও ছাগল ২০০ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। অর্থবছরের চলিত মাসে ১১ জুলাই পর্যন্ত দুই হাজার ২৬৭টি গরু, ৭৬৯টি মহিষ আমদানি করে ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা রাজস্ব পাওয়া গেছে। আর হঠাৎ গত ছয় দিন ধরে কোনো পশু আমদানি হয়নি। কিন্তু ১৯ জুলাই আবার আমদানি শুরু হওয়ার পর তা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজারে।

সূত্র আরও জানায়, সদ্য গত অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫৬৭টি পশু আমদানি করে ছয় কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রাজস্ব পায় এনবিআর। গত বছরে আগস্টের শেষে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে গবাদিপশু আমদানিও থমকে যায়। এরপরও রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রভাব কাটিয়ে বিপুলসংখ্যক পশু আমদানি করা সম্ভব হয়। এর আগের ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৯৩৬টি পশু আমদানি করে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা রাজস্ব পায় রাষ্ট্রীয় কোষাগার। পশু আমদানি যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও।

করিডোর ব্যবসায়ী সাবরাং ইউপি সদস্য মুহাম্মদ শরীফ জানান, নানা প্রতিকূল পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে পশু আমদানি হলেও অবকাঠামোর অভাবে পশু রাখা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। আবার আমদানি করা পশুর রাজস্ব প্রদান ও ছাড়পত্র সংগ্রহে সুদূর টেকনাফ যাতায়াত করতে হয় ব্যবসায়ীদের। করিডোরের এসব সমস্যা চিহ্নিত করে রাজস্ব আদায় ও ছাড়পত্র করিডোরেই করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করা গেলে আমদানি আরও বাড়বে।

করিডোর ব্যবসায়ীরা জানান, মাঝে মধ্যে নাফ নদী থেকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী গবাদিপশু ভর্তি ট্রলার ধরে নিয়ে যায়। প্রতি বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এখনও পর্যন্ত হয়নি। নাফ নদীতে বিজিবির টহল বাড়ানো হলে তারা সেই সাহস পাবে না। নাফ নদীর তীরবর্তী মিয়ানমার সীমানায় কয়েকটি বিজিপি ক্যাম্প রয়েছে। সেই পাশ দিয়ে নাফ নদীর মোহনা হয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে এধরনের বাধার সৃষ্টি করে থাকে।

টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ক্রয় ও বিক্রয় দামের সমস্যায় আমদানি কয়েকদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে তা আবার শুরু হয়েছে। গত অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি করে ছয় কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু আমদানি বাড়বে বলে আশা করেন এ কর্মকর্তা।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা শাহপরীর দ্বীপ করিডরে পশু কিনতে আসবেন। এখান থেকে পশু সরবরাহের ক্ষেত্রে পথে যাতে কোনো রকম চাঁদাবাজি না হয় তাও নজরে রাখা হচ্ছে।