স্পোর্টস ডেস্ক: কথায় ও হাব-ভাবে বুঝিয়েই দিয়েছেন, সাকিব যে টেস্ট খেলতে অনাগ্রহী- তা তার জানা ছিল না। তবে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান আকরাম খান পরিষ্কার বলেই ফেলেছেন, তিনি কোনভাবেই চান না যে সাকিব টেস্ট থেকে সরে দাঁড়াক। এ সম্পর্কে তার কথা, ‘এমনটা আসলে হওয়া উচিৎ না। আমার নিজের কাছে শুনেও ব্যাপারটি খারাপ লাগলো।’
এদিকে শুধু সাকিব ইস্যুই নয়, কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের বিষয়েও বেশ নমনীয় আকরাম খান। মোস্তাফিজ এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার আইপিএল খেলতে গিয়ে আহত হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন এবং তারপর জাতীয় দলের পরবর্তী সিরিজ মিস করেছেন। এবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলতে গিয়ে শেষ ম্যাচে পায়ের সামনের অংশে ব্যাথা পেয়ে দেরাদুনে আফগানিস্তানের সাথে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পারেননি। তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগা ও জ্যামাইকায় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজও মিস করেছেন।
এই যে একাধিকবার ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে ইনজুরি নিয়ে দেশে ফেরা এবং জাতীয় দলে খেলতে না পারা নিয়ে খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মোস্তাফিজের ওপর চটেছেন এবং তাকে পরবর্তী দুই বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট না খেলার কথা জানিয়েছেন। আগামী দুই বছর মোস্তাফিজকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার অনুমতি না দেয়ার কথা জানিয়েও দিয়েছেন; কিন্তু ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খানের সুর এ বিষয়ে বেশ নরম।
এ সম্পর্কে আকরামের কথা, ‘সব সময় নয়। সে মাত্র দুই বার বাইরে খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছে। ইনজুরি তো আর ইচ্ছাকৃতভাবে হয় না। ও কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজেকে ফিরে পেতে। শ্রীলঙ্কা এ দলের সাথে চার দিনের ম্যাচও খেলেছে। এবার যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। আমার কাছে মনে হয়, সে পুরোপুরি ফিট আছে বিধায় ম্যাচ খেলেছে এবং আগামীতে ভালো করবে বলে আশা করছি।’
এদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জাতীয় দলের টেস্টের পারফরমেন্স নিয়ে নির্বাচক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান এবং বোর্ডের কজন শীর্ষ কর্তা একান্তে বসেছিলেন। সেখানে কোন বড় সড় সিদ্ধান্ত না হলেও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খান অকপটে স্বীকার করেছেন, জাতীয় দলের খারাপ সময় কাটছে। টেস্টের পারফর্মেন্স ভালো হয়নি। তাই আমরা আলাপ আলোচনা করেছি। যেহেতু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো করতে পারিনি, সেই কারণে আলোচনা হয়েছে।’
আকরাম মানছেন, ‘মাঝে-মধ্যে খারাপ পারফরমেন্স হতেই পারে। তবে যতটা খারাপ হয়েছে, এত খারাপ হবে সেটি চিন্তা করিনি। এখান থেকে কিভাবে আমরা বের হয়ে আসবো সেটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সামনে আমাদের ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি আছে। সেগুলোতে আমরা কিভাবে ভালো করতে পারি তা নিয়েই আলাপ হচ্ছে।’
টেস্ট পারফরমেন্স নিয়ে অনেক কথার ভিড়ে প্রধান নির্বাচক আরও যোগ করেছেন, ‘যখনই খারাপ খেলবেন, তখনই আপনাকে নিয়ে কথা উঠবে। আর সত্যি কথা বলতে কি, লঙ্গার ভার্সনে অর্থাৎ টেস্টে ভালো করার ব্যাপারটি নির্ভর করে অনেকটা বোলারদের ওপর। যেহেতু প্রথম ইনিংসে আমরা ব্যাটিংয়ে অনেক খারাপ করেছি সুতরাং বোলিংয়ে ভালো করার দরকার ছিলো। এর আগে কিন্তু একটি দল হিসেবে আমরা টেস্টে ভালো খেলেছি। নিউজিল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, শততম টেস্ট যেটি জিতেছি। তো এখন খারাপ সময় যাচ্ছে, তবে এত যে খারাপ সামনেও যাবে এমনটা না। ওয়ানডেতে আমরা মোটামুটি একটি ভালো অবস্থানে আছি। তবে আমাদের টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে আরো উন্নতি করতে হবে।’
টেস্টে আলাদা দল গঠন নিয়েও কথা হচ্ছে। তবে আকরাম খান সে সম্ভাবন উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘টেস্টে আলাদা দল গঠনের মতো অবস্থা আমাদের এখনো হয়নি। যেহেতু আমাদের অপশনটি অনেক কম। হিসেব করলে দেখবেন যে ৮০ ভাগ ক্রিকেটার কিন্তু তিন ফরম্যাটেই খেলছে। আপনার তো অপশনটি থাকতে হবে তাহলে আলাদা দল তৈরি করা যাবে।’
পেস বোলিং এ মুহূর্তে জাতীয় দলের অন্যতম দূর্বল জায়গা। তা মানতে দ্বিধা নেই আকরাম খানের। পেস বোলিংকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। এই মুহূর্তে যারা জাতীয় দলে আছে এবং যাদেরকে আমরা দ্বিতীয় লিস্টে রেখেছি ওদের মধ্যে কিন্তু ছয়জন ইনজুরিতে। ব্যাপারটি হলো শুধু পারফর্মেন্স নয়, ফিটনেস নিয়েও কাজ করতে হবে ওদের। সেদিক দিয়ে অনেক গ্যাপ আছে। সে ক্ষেত্রে ব্যাডলাক। এরপরেও আমরা চেষ্টা করছি। এই বছরে আমাদের অনেকগুলো সফর হয়েছে। ‘এ’ দলের সফর আছে, হাইপারফর্মেন্সের সফর হবে শ্রীলঙ্কায়। আমার মনে হয় ফিটনেসটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগের তুলনায় আমাদের ফাস্ট বোলারের লিস্টটা লম্বা হয়েছে, তবে ইনজুরি সমস্যা বেশি রয়েছে।’