চৌগাছায় বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

চৌগাছা প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছায় দির্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসা পৈত্রিক বসত-ভিটা থেকে ১০টি ক্ষুদ্র-নৃত্বাত্তিক জনগোষ্ঠী (স্থানীয় অদিবাসী) পরিবারকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ওই সম্প্রদায়ের কয়েকশত নারী-পুরুষ ও শিশু।

chowgacha newsমঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারটায় চৌগাছা মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য মোড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বলা হয় চৌগাছার ক্ষুদ্র-নৃত্বাত্তিক এই সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটা হিসেবে উপজেলা পরিষদের উত্তর পাশে ১৩২ নং দাগের জমিতে বসবাস করেন। স্থানীয়ভাবে তারা আদিবাসী সরদার হিসেবে পরিচিত। সেখানে মৃত ভোলানাথ সরদার ও মৃত বন্দিরাম সরদার নামে দুই সহোদরের ৭ শতাংশ জমি রয়েছে। সেখানে দির্ঘদিন থেকে পৌরসভার ইছাপুর গ্রামের জনৈক শাহিন দেওয়ান তাদের বসবাসকৃত সম্পত্তিটি দখল করার পায়তার করে আসছেন। সে মোতাবেক গত আদালতের একটি আদেশের কপিসহ গত ২৪ জুলাই চৌগাছা থানার এসআই আক্তারুজ্জামানকে নিয়ে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে আসে। আদালতের কপি দেখিয়ে সেখানে বসবাসরত ভানু সরদার, তারক সরদার, কার্তিক সরদার, সিপন সরদার, বিলু সরদার, আরতী রাণী সরদার, লক্ষী রাণী সরদারসহ ১০টি পরিবারের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে দেয় চৌগাছা থানা পুলিশ।
এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি ওই স্থানে বসবাসরত আদিবাসী পরিবারগুলো আদালতের স্মরণাপন্ন হলে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। মানববন্ধনে তারা দাবি করেছেন আদালতে মামলা করলেও এ বিষয়ে তারা কোন প্রকার নোটিশ এখন পর্যন্ত পাননি। আদালতের যে রায় নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে সে রায় নিয়ে এসেও তাদের জায়াগা ছেড়ে দেয়ার জন্য কোন সময় দেয়া হয়নি।

chowgacha jessore newsআদিবাসীরা আরো দাবি করেন, বাদিপক্ষ দাবি করে ভোলানাথ সরদারের নিকট থেকে জনৈক মিজানুর রহমান জমিটি ক্রয় করেন, তাহলে সহোদর বন্দিরামের জমিও তারা দখল করতে আসেন কিভাবে?

তারা মানববন্ধনস্থলে ২০০২ সালের ১০ মার্চ খুলনার তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি আপীল কেস নং ০২/২০০০ এর আদেশের কপি সরবরাহ করেছেন। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে বাদিপক্ষের (শাহিন দেওয়ানের পিতা মিজানুর রহমানের) দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমান নেই এবং তাদের প্রদর্শনকৃত দলিলে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এই আপীল কেসটি ছিল তৎকালীন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কর্তৃক তার আদালতের মিসকেস ৫১/xiii/৯৬-৯৭নং মোকাদ্দামার ২৭-১০.৯৯ সালে প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে। বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেয়া আদেশ বহাল রেখে রিভিশন মামলাটি খারিজ করে দেন।

এদিকে ২৪ জুলাই বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ করেই ১০টি পরিবারকে বসত-ভিটা থেকে উচ্ছেদ করায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। এ অবস্থার প্রতিকার চেয়েই তারা এই মানববন্ধ করছেন।

মানববন্ধন শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি দিতে যান।
এবিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য শাহিন দেওয়ানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

চৌগাছা থানার এসআই আক্তারুজ্জামান বলেন, এখানে আমাদের বিষয় নয়। আদালতের নির্দেশে সার্ভেয়ার ও প্রসেসরের উপস্থিতিতে প্রথমে বসবাসরতদের মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়। পরে উচ্ছেদ করা হয়। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভুমিকা পালন করেছে মাত্র।

চৌগাছা থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, মানববন্ধ বা উচ্ছেদ কোনটিই আমাদের ব্যাপার নয়। এটি আদালতের বিষয়। পুলিশ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভুমিকার রেখেছে।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবাদত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কোন স্মাকরকলিপি পায়নি। তবে আদিবাসীদের বিষয়টি আমি শুনেছি।