যশোরে চিত্রা নদীতে আঁড়বাধ ও কারেন্ট জালে চলছে দেশী মাছের রেনু পোনা নিধন

নাজমুস সাকিব আকাশ, (খাজুরা) যশোর: যশোরের ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদীতে অবৈধ আঁড়বাধ (বান্দাল) ও অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে দেশী মাছের রেনু পোনার অবাধ নিধন চলছে। আর এসব আঁড়বাধ দেওয়ায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে যে কোন সময় নদীর দুই কুল প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখো যায়, যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী সীমাখালী বাজার ভায়া খাজুরা বাজার তৈলকুপ ব্রীজ হয়ে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার নদী পথে রয়েছে ২৫ টিরও অধিক আঁড়বাধ (বান্দাল)। এক শ্রেণীর অসাধু মৎস ব্যবসায়ীদের দ্বারা এই সব আঁড়বাধ/পাটা, অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় নদীতে উৎপাদিত সব ধরনের মাছের পোনাসহ অন্যান্য মাছ নিধন হয়ে যাচ্ছে। ফলে চিত্রা নদীর দুই কুলের প্রায় সহস্রাধিক জেলে/মালো পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।

জাল যার জলা তার হলেও বাস্তবে ক্ষমতাধরদের কাছে জিম্মি তারা। যার কারণে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে প্রকৃত মৎসজীবীরা।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থা বিরাজ করায় ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ফলে আগামী ৩ দিন দেশের সর্বত্র ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ একটু বেশী হওয়ায় অনেক আঁড়বাধ পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা সবাইকে বোকা বানাচ্ছে। পাটা তলিয়ে গেলেও পানির নিচে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে অসাধু মৎস ব্যবসায়ীরা। তাই পানির উপর থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই বলে দাবী জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।

এদিকে আঁড়বাধ গুলোর কারণে নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী ফসলের জমিতে পানি উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বোপরি দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশী মাছের অভায়াশ্রাম গড়ে তোলার ফলে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভায়াশ্রমের মা মাছগুলো প্রাকৃতিক মৎসের উৎস সমূহে ব্যাপকভাবে ডিম ছাড়ে। জন্ম নেয় দেশী বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা কিন্তু জেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার এই নদীপথে যারা অবৈধ আঁড়বাধ/পাটা দিয়েছে তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ব্যবহার করে দেশী প্রজাতির রেনু ও ধানী পোনা ধ্বংস করে চলছে। কোন কোন মাছের সাইজ এতই ছোট যে বাজারের ক্রেতারা পর্যন্ত মাছ কিনতে অনীহা প্রকাশ করে এবং অন্যান্য মৎসজীবীরাও মাছ ধরার প্রতিবাদ করছে। তবে অবৈধ আঁড়বাধ দেওয়া ব্যক্তিগণ আইন ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে তাদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। তারা প্রতিবাদকারীদের প্রকাশ্যে জানিয়ে দেয় তাদের হাত অনেক লম্বা, টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করা যায়। নালিশ করে তাদের কিছুই করা যাবে না। নদীতে দেশী প্রজাতির বোয়ালের পোনা যার বর্তমান সাইজ দেড় থকে আড়াই ইঞ্চি। শিং, টেংরা, বেলে, পাবদা, পুটি, টাকি, বাইন, মাগুরাসহ হরেক রকমের মাছের রেনু ও ধানী পোনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নির্দয় নিষ্ঠুর দখলদারীরা অতি মুনাফা লাভের আশায় দেশের সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে। বিলুপ্ত প্রায় এমন সব মাছ পাওয়া যাচ্ছে নদীতে যা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই নাম জানে না।

এ ব্যাপারে বাঘারপাড়া উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। অতি দ্রুত আঁড়বাধ উচ্ছেদের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

চিত্রার তীরবর্তী সাধারণ মানুষ ও মৎসজীবীরা অচিরেই অবৈধ পাটা/আঁড়বাধ তুলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও আইন ভঙ্গকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।