ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি। বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা ছাত্রবিক্ষোভের পঞ্চম দিনে গতকাল দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সমর্থন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করছি।
তাদের এ আন্দোলন যৌক্তিক। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে দেশে একের পর এক অঘটন ঘটলেও অনির্বাচিত অবৈধ এ সরকার তা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাই জনগণকে এই সরকারের পতন আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা ও গণপরিবহনের সংকট সমাধানে ব্যর্থতার জন্য সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।
তিনি বলেন, এখানে ভয়াবহ কাণ্ড, পাশবিক অত্যাচার নির্যাতন চলছে। এই পাশবিক অত্যাচার-নির্যাতনের মূল কারণটা হলো, যার যা খুশি করছে। এখানে সরকার বলে আদৌ কিছু নেই। ইট হ্যাজ টোটালি ফেইলড অ্যান্ড কলাপস্ড। আমরা যেটা বলে আসছি- এটা একটা পুরোপুরি ব্যর্থ সরকার। আমরা এই ঘটনাবলীর জন্য সরকারকে দায়ী এবং অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। কেবল নৌ-মন্ত্রী বা সেতুমন্ত্রীরই নয়, আমরা পুরো সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে জনজীবনকে দুর্বিসহ করে ফেলেছে।
মানুষ এখন জীবনের কোনো নিরাপত্তা কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। তিন দিন ধরে ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলন চলছে, কী দুর্ভোগ চলছে। কিন্তু সেটা নিরসন করতে সরকারের তরফে কোনো ব্যবস্থা নেই। মির্জা আলমগীর বলেন, সরকার সুন্দর সুন্দর কথা বলছে, মিষ্টি কথা বলছে। কিন্তু যে কাজগুলো করা দরকার সেগুলো করছে না। প্রথম দিনই যদি ব্যবস্থা নিতো তাহলে পরের দিন নারায়ণগঞ্জ ও শনির আখড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটত না। কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার শোকপ্রকাশ করে ঘটনার পর নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের বক্তব্যের সমালোচনা করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কি তার দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন? চালকদের লাইসেন্স ও গাড়ি চালানোর দায়িত্ব কে দিয়েছেন? এখানে কেন কোনো ব্যবস্থাপনা নেই? ঢাকায় ট্রাফিকের কোনো নিয়মই নেই। কারণ, সরকারের কোনো জবাবদিহি নেই। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরাও বলতে পারি- শেখ হাসিনা দেশে আসার ১৭ দিন পরে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল।
আমরা সেটা বলতে চাই না। তবে এটা পরিষ্কার বলতে চাই, জিয়াউর রহমান কোনো হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, মুজিব হত্যায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার ব্যাপারে কোথাও আজ পর্যন্ত একটি কথাও কেউ বলেননি। মুজিব হত্যার বিচারের গোটা প্রসিডিংসের মধ্যে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণে কেউ জিয়াউর রহমান সাহেবের নাম বলেননি। আসলে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমাতে না পেরে আন্দোলনকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলেছেন সরকারের প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক শীর্ষ পরিবহন নেতা মির্জা আব্বাস বলেন, দেশে সড়ক পরিবহনে একটা বিশৃঙ্খলা চলছে। আমার মনে হচ্ছে এটা দেখার কেউ নেই।
গাড়ির ড্রাইভার হোক, পুলিশ হোক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা- যেই হোক, তারা যা খুশি তাই করছে, কোনো বিচার নেই। নতুন পরিবহন আইনে বাসের দুই দিকে এবড়ো-খেবড়ো থাকলে রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া; বাস ও ট্রাক ড্রাইভারের ক্যাটাগরি রাখা; তাদের উপযুক্ত ট্রেনিং স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া; বয়সসীমা বেঁধে দেয়া এবং বাসের মালিককে বাসের চালক নিয়োগ দেয়ার বিধান প্রবর্তন করার প্রস্তাব করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, শাজাহান খানদের মতো লোকেরা এসে এমন একটা অবস্থা করলো- আমার বাসটা টার্মিনালে আসার পর সঙ্গে সঙ্গে বাসের ড্রাইভার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কে চালাচ্ছে জানার উপায় নেই। অনেক দিন যাবৎ এটা চলছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনা করবে, আমাদের সেই সন্তানরা দুই দিন ধরে যা করেছে, যেভাবে গাড়িচালকদের লাইসেন্স দেখেছে, তাকে সমর্থন জানাই। আমরা যেটা পারিনি, তারা সেটা পেরেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণের পর ব্রাহ্মণবাড়ীয়া পুলিশ প্রশাসন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বর্ডার থেকে নিয়ে আসে। জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে মানুষ রাস্তায় নামলো, তখন উনি কেন ভারতমুখী হলেন এটাও প্রশ্ন। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।