বিনোদন ডেস্ক: সংস্কৃতি চর্চায় চলচ্চিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। স্বাধীনতা এবং এর পরবর্তী সময়ে আমাদের চলচ্চিত্র দর্শকদের মন জয় করেছিল। সেসব চলচ্চিত্র হয়েছিল হিট-সুপারহিট। পরিচালক, শিল্পীদের খ্যাতির পাশাপাশি ছবির প্রযোজকরাও হয়েছেন লাভবান। কিন্তু কয়েক দশক ধরে প্রেক্ষাগৃহের চিত্র একদমই আলাদা। দেশীয় ছবির বাইরে কলকাতার কিছু ছবি আমদানি করে এদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেবার পরও সিনেমা হলে দর্শকরা তেমন ভিড় করছে না বলে প্রায়ই অভিযোগ করেন দেশীয় প্রযোজকরা।
গত জুলাই মাসের ২০ তারিখে মুক্তি পেয়েছিল কলকাতার রাজা চন্দের পরিচালনায় ‘সুলতান’ ছবিটি। এরপর ২৭ তারিখে আমদানি নীতিমালায় আসে কলকাতার আরেক নির্মাতা জয়দীপ মুখার্জির ছবি ‘ভাইজান এলো রে’। জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘পোড়ামন টু’ ছবির পর শাকিব খান অভিনীত এ ছবিটি মোটামুটি ব্যবসা করে। গতকাল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে কলকাতার আরেকটি ছবি ‘ফিদা’। ভারতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কাছ থেকে ছবিটি বাংলাদেশে আমদানি করেছে আরাধনা এন্টারপ্রাইজ। ছবিটি পরিচালনা করেছেন পথিকৃৎ বাসু। আরাধনা এন্টারপ্রাইজ এর আগে কলকাতার তারকাবহুল ছবি ‘কেলোর কীর্তি’ বাংলাদেশে মুক্তি দিলেও ছবিটি ব্যবসা করেনি। সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ফিদা’ ছবিটি এবার কেমন ব্যবসা করবে তা আর কয়েকদিন পরই জানা যাবে।
সাফটা চুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি আমদানিকৃত ছবির বিপরীতে দেশের একটি ছবিও কলকাতায় মুক্তি দেয়ার কথা। অথচ এসব ছবির বিপরীতে কোনো ছবি কলকাতায় মুক্তি দেয়া হয়েছে কিংবা দেশীয় নতুন কোনো ছবি কি ওখানে মুক্তি পাচ্ছে এ বিষয়ে কোনো খবর নেই। সামনে কলকাতার ‘পিয়া রে’ নামে আরেকটি ছবির সেন্সর হয়েছে। এটাও সামনে মুক্তি পাবে। তাই বেড়েই চলছে আমদানি ছবির সংখ্যা।
এদিকে ১০ই আগস্ট দেশীয় ছবি ‘ফিফটি ফিফটি লাভ’ মুক্তি দেবার কথা থাকলেও আমদানি ছবি মুক্তি পাবার কারণে প্রযোজক এখন সেই সিদ্ধান্ত বদল করেছেন। ছবির প্রযোজক মাসুম পাটোয়ারি বলেন, একের পর এক আমদানি ছবি এদেশে মুক্তি পেলে আমরা দেশীয় ছবি কিভাবে মুক্তি দেবো? আমি সেন্সর ছাড়পত্র সার্টিফিকেট হাতে পাবার পরও আমার ছবিটি মুক্তি দিতে সাহস পাচ্ছি না এখন। কারণ সিনেমা হল মালিকরা ওপার বাংলার আমদানি ছবি নিয়ে টানাটানি করছে। আমদানি ছবি মুক্তির বিপক্ষে আমি আমার ছবিটি মুক্তি দিতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ আমি এই সময়ে মুক্তি দিলে ভালো সিনেমা হল পাবো না। তাই ছবি মুক্তির তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এর আগে সাইমন ও মাহি অভিনীত ‘জান্নাত’ ছবিটি মুক্তির তারিখ থাকলেও কলকাতার ‘ভাইজান এলো রে’ ছবিটি মুক্তি পাবার কারণে প্রযোজনা সংস্থাটি সেসময় ছবিটি মুক্তি দেয়নি।
তবে আমদানি ছবি মুক্তির বিষয়ে ‘আয়নাবাজি’ খ্যাত জনপ্রিয় নির্মাতা অমিতাভ রেজা বলেন, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজ ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা। চলচ্চিত্রের পলিসি কি রকম হওয়া উচিত এটা নির্মাতাদের ভাবলে হবে না। নির্মাতাদের কাজ ভালো ছবি একের পর এক বানিয়ে যাওয়া। দর্শকদের সামনে ঠিক গল্প নিয়ে হাজির হওয়া উচিত। ছবি কোনটা কোন্ সময় আসতেছে বা এদেশে বাইরের ছবি মুক্তি পাচ্ছে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালো চলচ্চিত্র নিয়ে দর্শকদের সামনে বেশি বেশি হাজির হওয়া। তাহলে মেধার জয় হবে। সারা বিশ্বেই ছবি মুক্তি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তবে এটার সমাধান আমাদের ভালো চলচ্চিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমেই করতে হবে।