২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি আবদুল হালিমকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে ভাষায় কথা বলেছেন, সেটি অভিনবই বলা যায়।
১৯৯৯ সালে জোটবদ্ধ হওয়ার পর থেকে বিএনপি তার শরিক দলটিকে অতিরিক্ত সমীহ করেছে বলেই দলের মধ্যেও নানা সময় ক্ষোভ আছে।
সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর মেয়র প্রার্থীকে বসাতে গেয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হয়েছে বিএনপিকে। অথচ গাজীপুরে জামায়াত কখনও বলার মতো ভোট পেয়েছে, এমনটি নয়।
সিলেটে অনেক ভোট আছে, এমন দাবি করে বিএনপির অনুরোধ উপেক্ষা করে আলাদা নির্বাচন করে ‘শিক্ষা’ পেয়ে গেছে জামায়াত। সেখানে ১০ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন দলের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
আর এই নির্বাচনের পর জোটের প্রথম বৈঠকে জামায়াত নেতা আবদুল হালিমকে রীতিমতো টিপ্পনীর মধ্যে পড়তে হয়েছে। মির্জা ফখরুলও গত ৪ জুলাই জামায়াতের একটি বিবৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি সবসময় আপ্রাণ চেষ্টা করছি জোটের ঐক্য ধরে রাখতে। আর আপনারা আমার নাম জড়িয়ে যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ। আমি কষ্ট পেয়েছি। আপনাদের কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি।’
এ সময় জামায়াত নেতা হালিম বলেন, ‘বিষয়টি এমনটা হয়নি।’ তখন বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঠিক আছে তাহলে আপনি আপনার ডকুমেন্ট নিয়ে আসবেন, আমিও যেসব পত্রিকায় খবর এসেছে সেটা নিয়ে আসব।’।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যখন দূরত্বের খবর আসছে, সম্পর্ক ছিন্নের বিষয়ে আলোচনার গুঞ্জন এসেছে, তখন দুই নেতার মধ্যে এই ধরনের কথোপকথন উস্কে দিয়েছে আলোচনা।
শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে বিএনপি ছাড়বে কি না- সেটা পরিষ্কার না হলেও দলটির সঙ্গে দূরত্বের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন জোটের কোনো কোনো শরিকদলের নেতা।
বিএনপি যে জাতীয় ঐক্য গড়তে চাইছে, তাতে জামায়াত একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, বিএনপির যাদের প্রতি আগ্রহ আছে, তারা জামায়াতের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে রেখেছেন। এই আপত্তি যতটা না আদর্শিক, তার চেয়ে বেশি তারা জোটে থাকলে অন্যদের গুরুত্বহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।
জোটের একটি শরিক দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব কিছুটা প্রকাশ্য হতে যাচ্ছে। তবে সিলেটে জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী দেয়ায় জামায়াতের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। এই সুযোগে বিএনপিতে যারা জামায়াত বিরোধী তারা সক্রিয় হয়েছে।’
‘আর বিএনপির তৃণমূলের নেতারা জামায়াতকে বাদ দেয়ার কথা বলেছেন। ফলে নেতা-কর্মীদের রায় তো বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে।’
জোটের একটি দলের মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি চাচ্ছে জামায়াত জোট থেকে চলে যাক। আর জামায়াত বলছে রাখতে না চাইলে আনুষ্ঠানিক বলে দিক। এই পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি অস্বস্তিতে আছে। জোটের বৈঠকে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। যদিও জামায়াতকে রাখা বা ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি এখনও অন্ধকারে।’
গত সপ্তাহে বিএনপির তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে প্রায় দুই শ’র মত নেতা বক্তব্য রাখেন, যাদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশেষ করে সিলেট নির্বাচনে জামায়াতের ভোটের অবস্থা দেখে বিএনপি নেতারা হিসেব কষছেন, ভোটের রাজনীতিতে আগামীতে খুব প্রভাব ফেলতে পারবে না নিবন্ধন হারানো এই দলটি।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ঢাকাটাইমকে বলেন, ‘সিলেটে মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থী থাকার পরও বিএনপির মেয়র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত বিএনপির জন্য কোনও গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য না। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্য করতে জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়া দরকার।’
যদিও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান বলেন, ‘বিষয়টিকে এমনভাবে দেখার কিছু নেই। জামায়াতের সঙ্গে জোট নির্বাচনী। এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই। তাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়া কমার কিছু নেই। আগে যেমন ছিলো এখনও তেমনি।’
‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটি একজন সদস্য বলেন, ‘তৃণমূল নেতারা জামায়াতকে বাদ দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। সঙ্গে আরো অনেক কথা বলেছেন। আমরা সার্বিক বিষয় নিয়েই আশা করি সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।’