লিওনেল মেসি কি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা চালিয়ে যাবেন? নাকি জাতীয় দলের পাট চুকিয়ে নিয়ে ফেলবেন অবসর? রাশিয়া বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর থেকেই প্রশ্নটা ঘুরে ফিরছে বাতাসে। কিন্তু মেসি নিশ্চিত করে কিছুই বলেননি। তবে এবার যা করলেন, যে পথ বেছে নিলেন, তা তার অবসরের সম্ভাবনাকেই জোরালো করল। আগামী মাসেই দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন না মেসি।
শুধু এই দুটি ম্যাচই নয়। এই বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালেই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে আর কোনো ম্যাচ খেলবেন না মেসি। তিনি নিজেই আর্জেন্টিনার অন্তর্বর্তীকালীন কোচ লিওনেল স্কালোনি ও পাবলো আইমারকে জানিয়ে দিয়েছেন, এই বছরে আর কোনো ম্যাচ না খেলার কথা। মানে আগামী অক্টোবরে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটাও খেলবেন না মেসি।
কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বিশ্রামের কথা বলেছেন। কিন্তু বিশ্রামের নামে মেসি আসলে জাতীয় দল থেকে ‘সাময়িক অবসর’ই নিয়ে ফেললেন! সেই ‘সাময়িক অবসরে’র মেয়াদ কবে শেষ হবে, আদৌ শেষ হবে কিনা, সেই বিষয়টিও ধোয়াশায় ডাকা। কারণ, বিশ্রাম শেষে তিনি কবে জাতীয় দলে ফিরবেন, সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি। এমনকি ২০১৯ কোপা আমেরিকাতে খেলবেন কিনা, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করেননি।
কেন এভাবে জাতীয় দল থেকে নিজেকে দূরের রাখার সিদ্ধান্ত? কেন ফেরার সময় সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত দিলেন না মেসি? প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে ফুটবল বিশ্লেষকরা এই শঙ্কাও করছেন, মেসির এই ‘সাময়িক অবসর’ রূপ নিতে পারে ‘আনুষ্ঠানিক অবসরে’ও! নিজের জাতীয় দল ক্যারিয়ার নিয়ে এই ধোয়াশাটা তৈরি করলেন মেসি নিজেই।
২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসরের ফাইনালে হেরে যাওয়ার পরেই হতাশায় জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফেলেন মেসি। দেশবাসীর অনুরোধে দুই মাস পরই অবশ্য অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে অবসর থেকে ফিরে আসা, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। দেশ আর্জেন্টিনাকে কষ্টেসৃষ্টে বিশ্বকাপের টিকিট পাইয়ে দিতে সক্ষম হলেও রাশিয়ায় এসে সুপার ফ্লপ।
শিরোপার স্বপ্ন নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে বিদায় নিতে হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড বা শেষ ষোল থেকেই। দলের সেই ব্যর্থতার বড় দায়টা অধিনায়ক মেসিরই। কারণ ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচে মেসিকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। বিশ্বসেরা মেসি হয়েছিলেন নিজের ছায়া!
বয়স এখনই ৩১ হয়ে গেছে। তাই ৪ বছর পরের কাতার বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে একটা সংশয় আছেই। কারণ, ২০২২ সালে তার বয়স হয়ে যাবে ৩৫। একজন ফরোয়ার্ডের জন্য বয়সটা একটু বেশিই। হয়তো বয়সের ভারকে হার মানিয়ে খেলতে পারবেনও। কিন্তু ততদিন নিজের ফর্মটা ধরে রাখতে পারবেন কি?
এটা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকছে। য়ৌবনে, ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে যা পারলেন না, ৩৫-এর বুড়ো কোটায় দাঁড়িয়ে স্বপ্নের সেই বিশ্বকাপ কি জিততে পারবেন মেসি? প্রশ্নগুলো হয়তো ভাবাচ্ছে মেসিকেও। তাই হয়তো নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন মেসি। আর সেই ভাবনাটা যে তিনি দীর্ঘ সময় ধরেই ভাবতে চান, সেটা তার এই বিশ্রাম নেওয়া থেকেই স্পষ্ট।
যাই হোক, মেসির এই সিদ্ধান্তে ফুটবলবোদ্ধারা অন্য একটা গন্ধও খুঁজতে চাইছেন। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার দায়ে হোর্হে সাম্পাওলিকে ছাটাই করা হয়েছে। তার জায়গায় আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) ২০১৮ সালের বাকি সময়টুকুর জন্য অন্তর্বর্তী কোচ করেছে লিওনেল স্কালোনি ও পাবলো আইমারকে। যে দুজনই মেসিরই সাবেক সতীর্থ। ২০০৬ বিশ্বকাপে তারা তিনজনই ছিলেন আর্জেন্টিনার দলে। ফুটবলার হিসেবেও স্কালোনি ও আইমার আহামরি কিছু ছিলেন না। কোচিং দক্ষতাতেও অনভিজ্ঞ। সব মিলে মেসি এই দুই সাবেক সতীর্থের অধীনে খেলতে চান না বলেই একটা গুঞ্জন আছে।
জানুয়ারিতে স্থায়ী কোচ নিয়োগ দেওয়ার কথা এএফএ-র। ফূটবলবোদ্ধাদের মতে আর্জেন্টিনার পূর্ণাঙ্গ কোচ হিসেবে কে দায়িত্ব পান, সেটাই দেখতে চাইছেন মেসি। সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা চালিয়ে যাবেন, নাকি নিয়ে ফেলবেন অবসর!
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সফরে আর্জেন্টিনা প্রীতি ম্যাচ দুটি খেলবে ৭ ও ১১ সেপ্টেম্বর। যথাক্রমে গুয়েতেমালা ও কলম্বিয়ার বিপক্ষে। এরপর অক্টোবরে মুখোমুখি হবে চিরশত্রু ব্রাজিলের। যে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে সৌদি আরবে। আর এই তিনটি ম্যাচই আর্জেন্টিনাকে খেলতে হবে মেসিকে ছাড়াই।