যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নবজাতক রেখে পালিয়েছেন তার গর্ভধারিণী মা।
মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালের ডেলিভারি কক্ষে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তিনি নবজাতকটিকে ফেলে পালিয়ে যান। রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতালের নার্স হ্যাপি রায় ও আয়া পুর্ণিমা কুণ্ডু নবজাতকটিকে গায়েব করে ফেলেন। পুরো ঘটনাটি হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়েছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে হাসপাতালে তোড়পাড়ের সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পরদিন বুধবার ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযুক্ত দুই নার্সকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নবজাতক উদ্ধারসহ প্রসূতি মায়ের পরিচয় উদঘাটন হয়নি।
মহিলা ওয়ার্ডের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে নার্স হ্যাপী রায় হাতে পলিথিন ভরে (গ্লাভস্ পরে) এক মহিলাকে নিয়ে ডেলিভারি রুমে নিয়ে যায়। একটানা প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। দীর্ঘক্ষণ ভিতরে কি হচ্ছে তা দেখার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেন তারা। প্রতিবারই তাদের তাড়িয়ে দেয় নার্স হ্যাপী রায়। এরই এক ফাঁকে তারা দেখেন নবজাতককে অক্সিজেন দিয়ে টেবিলের উপর ফেলে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে দুধ নিয়ে ছোটছুটি করেন ওই নার্স-আয়া। বেলা সাড়ে ৩টার পর নার্সসহ ওই মহিলা বেরিয়ে যায়।
দীর্ঘক্ষণ প্রসূতি ও নবজাতকসহ নার্সদের খোঁজ না থাকায় তাদের সন্দেহ হয়। রাত ৭টার দিকে লেবার রুমে গিয়ে তারা নবজাতকের খোঁজ করতে থাকেন। বালতির ভিতর উপুড় করা অবস্থায় নবজাতককে উদ্ধার করেন তারা। পরে নবজাতককে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে আয়া কাকলি, নার্স ঝরণা ও হ্যাপী রায় উদ্ধারকারি রোগীদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায় দুই নার্স ও আয়া নবজাতককে কেড়ে নিয়ে গায়েব করে দেয়। পরে আর ওই নবজাতকের হদিস মেলেনি। ওয়ার্ডের রোগীসহ অনেকের ধারনা কোন কুমারি মাকে ডেলিভারি করিয়েছেন নার্স ও আয়া। যে কারনে নবজাতকের মা আর ফিরে আসেনি। নার্স হ্যাপী রায়, ঝরণা ও আয়া কাকলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নবজাতকের মায়ের পরিচয়সহ পুরো রহস্য উন্মোচিত হবে বলে তারা দাবি করেন।
জানতে চাইলে নার্স ঝরনা জানান, নবজাতককে বাঁচাতে তিনি কয়েকবার দুধ পান করিয়েছেন। তার এক নিঃসন্তান আত্মীয় বাচ্চা চাইছিল। আয়া কাকলি ফোন করে বাচ্চা নেয়ার জন্য ডাকলে সেখানে তিনি যান।
জানতে চাইলে আয়া কাকলি সব কিছু অস্বীকার করে বলেন, নবজাতককে হাসপাতালে পেয়ে নার্স ঝরণাকে খবর দেয়া হয়।
নার্স হ্যাপী ক্ষেপে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, না জেনে শুনে কোন কথা বলবেন না। নবজাতককে হাসপাতালের লেবার রুমে পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রাজীব কুমার পাল বলেন, মঙ্গলবার রাত ৮.২০ মিনিটে তখনকার দায়িত্বরত নার্স নাজমা বিষয়টি আমাকে অবহিত করেন। লেবার রুমে গিয়ে সাত মাস বয়সী নবজাতকের চিকিৎসা করি। নার্স হ্যাপী রায়, ঝরণা ও আয়া কাকলি নবজাতককে নিয়ে যায়। এরপর নবজাতকের আর কোন হদিস পাইনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মনিরামপুর হাসপাতালের প্রধান ডা. আব্দুল গফ্ফার বলেন, এ ধরনের অপরাধ মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনায় অভিযুক্ত নার্স হ্যাপী রায় ও ঝরণা রানীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডাঃ রাজীব কুমার পালকে প্রধান করে সিনিয়র নার্স নাজমা ও প্রধান অফিস সহকারি গণেশ মন্ডলকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।
যশোর সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, ইতোমধ্যে বিভাগীয় প্রধান নার্স নাছিমা খাতুনকে তলব করা হয়েছে। তাকে দিয়ে তদন্তের পাশাপশি হাসপাতালের প্রধান ডাঃ আব্দুল গফ্ফারকে আগামী শনিবারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।