ফখরুলের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: কাদের

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিএনপি আবারও ১-১১ আনার ষড়যন্ত্র করছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেটি আর আসবে না।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু নিরাপদ সড়ক নয়, নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য এবার দেশকে স্বাধীন করুন।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি প্রশ্ন রাখতে চাই- এটা কি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল নয়? এর যদি বিচার করতে হয়, ফখরুলকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার করলে কি ভুল হবে? এ ধরনের কথা বলেও ফখরুল ইসলাম স্টিল নাউ আছেন। এখনও আপনি অ্যারেস্ট হননি, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’

বিএনপি মহাসচিবের কাছে ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন করেন, কোন স্বাধীনতা? পাকিস্তানে ইমরান সরকার এসেছে, মহাখুশি, না? মহাখুশি আপনারা? ফখরুল সাহেব, অচিরেই টের পাবেন কত ধানে কত চাল।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ‘১৭ আগস্ট সারা দেশে সিরিজি বোমা হামলা’র প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে।

মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গোপন বৈঠক চলছে, দেশে-বিদেশে বৈঠক চলছে। গত ৭ দিনে কারা ঘন ঘন যাতায়াত করছেন, সেই খবর আমরা জানি। ব্যাংকককে এখন ঘাঁটি করেছেন। কারা কারা আসছেন, কারা যাচ্ছেন, কি কি কথা হচ্ছে- মনে করেছেন আমরা জানি না।’

তিনি বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ঢাকা অচল হবে না। বাংলাদেশ অচল করা যাবে না, বিএনপি অচল হয়ে যাবে। অচল হওয়ার সব উপাদান তারা যুক্ত করে ফেলেছে।

১-১১ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আলমগীর সাহেব, ১-১১-এর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সব ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। খোঁজখবর আমরা নিচ্ছি। তবে একথা বলে রাখি, বাংলাদেশে আর ১-১১-এর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। জনগণ আপনাদের সব ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে। এ ষড়যন্ত্র সফল হবে না।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, বড় বড় কথা বলছেন। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, শরৎ বাবুর উপন্যাসে পড়েছিলাম, মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তখন মানুষের মুখের বিষ উগ্র হয়। মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তখন তার মনের জোর কমে যায়, গলার জোর বেড়ে যায়। বিএনপির অবস্থা কি তাই নয়? শক্তি কমে আসছে তাই বিএনপির গলার জোর বেড়ে গেছে। কথা বলতে বলতে লাগাম ছাড়া হয়ে গেছে, প্রধানমন্ত্রীকেও আক্রমণ করে কথা বলছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আবার বলে বুকের ওপর দানব সরকার, আমরা বলি বিএনপি নামক সাম্প্রদায়িক দানব পার্টি বাংলাদেশে যতদিন থাকবে এখানে অশান্তি দূর হবে না। দানব পার্টি যতদিন আছে দেশে অশান্তির আগুন জ্বালাবে।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচনে এ দানব পার্র্টির হাত থেকে দেশের জনগণকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উদ্ধার করতে হবে। বিএনপি ও তার সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে আপনারা প্রস্তুত? প্রস্তুত হন।

কয়েকটি মিডিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে বলেও দাবি করেন সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, কারা কারা পেছন থেকে ষড়যন্ত্রে বাতাস দিচ্ছে আমরা জানি। এ বাতাস দেয়া বন্ধ করুন। বিএনপি মাঠে না থাকলেও দু-একটা মিডিয়ার মধ্যে এ আন্দোলন আছে। টার্গেট হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা। শেষ পর্যন্ত বাংলার জনগণ রুখে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।

আবারও চক্রান্তে বিএনপি

এর আগে সকালে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিস্থিতি দেখতে যান ওবায়দুল কাদের। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১-১১-এর মতো ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চক্রান্তটা কিন্তু বিএনপি করছে, মিডিয়ার একটি অংশ তাদের সহযোগিতা করছে। ১-১১-এর কুশীলবদের সঙ্গে মিডিয়ার একটি অংশ ছিল তাদের সহযোগী। এখনও একই ষড়যন্ত্র সেই বিএনপিই করে যাচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ আমাদের সরকারের ওপর খুশি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর খুশি, আমাদের উন্নয়ন-অর্জনে জনগণ খুশি। আমরা জানি, জনগণ উন্নয়নের দিকে রায় দেবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আবারও রায় দেবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিএনপি এবং তাদের দোসররা হুমকি সৃষ্টি করছে।

মোটামুটি স্বস্তিদায়ক নির্বাচন পরিচালনার মতো শান্তিময় পরিবেশ দেশে বিরাজ করছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ শান্তিময় পরিবেশটাকে ভয়ংকর রূপ দেয়ার জন্য বিএনপি এবং তাদের দোসররা উঠেপড়ে লেগেছে।

নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির থাকার কোনো সুযোগ আছে কিনা- এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, পার্লামেন্টে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। যখন আসার সুযোগ ছিল, তখনও তারা আসেনি। তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত অফার করা হয়েছিল, কিন্তু তারা আসেনি। এবার তারা পার্লামেন্টে নেই। এবার তাদের ডাকতে হবে- এমন কোনো চিন্তা নেই। টেকনোক্র্যাট দল থেকে কেন নেব? বাইরে থেকেও তো নেয়া যেতে পারে। শিক্ষক আছে, সুশীল সমাজ আছে, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আছে- তাদের থেকে নেয়া যায়।

সরকার যে পদ্ধতিতে নির্বাচনে যেতে চাইছে, সেই পদ্ধতিতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী- এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, পদ্ধতিটা আমাদের সংবিধানের। পদ্ধতিটা বাংলাদেশের সংবিধানই নির্ধারণ করে দিয়েছে নির্বাচনটা কিভাবে হবে। আর সংবিধানের এ দায়িত্বটা থাকবে নির্বাচন কমিশনের ওপর।

ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে

মহাখালীতে ঈদযাত্রার পরিস্থিতি দেখার সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের ঈদে প্রধানমন্ত্রী ২৩টি সেতু উদ্বোধন করার পর ঢাকা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা এবার স্বস্তিদায়ক হবে, ভোগান্তি সহনীয় হবে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনী রেল ওভারপাস গত ঈদে কিছুটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটাও এবার খুলে দেয়া হয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল পথে অন্যান্য সমস্যাও সমাধান করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। সবমিলিয়ে গত ঈদের চেয়ে এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।

মহাখালীতে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এবার অভিযোগ কম পাওয়া যাচ্ছে বলেও দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি বেশি ভাড়া নিচ্ছে। জিজ্ঞাসা করেছি কোন কাউন্টার? তারা বলল, সিরাজগঞ্জের স্টারলাইন। সঙ্গে সঙ্গে এটা বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া আর কোনো অভিযোগ আসেনি।

কোরবানির পশুবাহী যানবাহন যথাযথ জায়গায় রাখার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পশুবাহী গাড়িগুলো যথাযথভাবে রাখলে এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় না নামালে আর কোথাও কোনো সমস্যা থাকবে না। আপনারা পশুবাহী গাড়িগুলো যথাযথ স্থানে রাখবেন।