এ মাসের মধ্যে মুক্তি পাবেন খালেদা জিয়া: মওদুদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সরকার আর যদি আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে এ মাসের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন।

রোববার দুপুরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামে তার নিজ বাসভবনে স্থানীয় সাংবাদিকদের এক প্রেস ব্রিফিং এ এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, বেগম জিয়া গ্রেফতারের ৩ সপ্তাহের মধ্যে জামিনে বের হয়ে যাওয়ার কথা। এখন যে অবস্থায় এসেছে, আর দু’টি মামলার জামিন বাকী রয়েছে। এখন হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ৭ দিনের মধ্যে এগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য। বেগম জিয়ার জামিন হাইকোর্ট থেকে নেয়া হবে। সরকার যদি আর কোন রকম হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে বেগম জিয়া এ মাসের মধ্যে জামিনে মুক্ত হবেন। বেগম জিয়া যেদিন মুক্তি পাবেন, সেদিন বাংলাদেশে নতুন করে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। সে গণজোয়ার ঠেকানো কারও সাধ্য থাকবে না।

মওদুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার হাইকোর্টের যে জামিন, তা ১লা অক্টোবর পর্যন্ত দেয়া আছে। তিনি ৬ মাস জেলখানায় আছেন সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে। নিম্ন আদালতের ওপর সরকারের যে আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এখন তো নিম্ন আদালত সুপ্রিম কোর্টের অধীনে না।

তিনি বলেন, গত বছর ১১ ডিসেম্বর সরকার গেজেট করে, নিম্ন আদালতের ক্ষমতাটা চলে গেছে নির্বাহী বিভাগের অধীনে। নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ, বদলি, পদ উন্নতি, তাদের শৃঙ্খলা সব কিছু নির্বাহী বিভাগের অধীনে। সুতরাং নিম্ন আদালতের বিচারকেরা সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং তাদের দায়-দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা সরকারের কাছে, সুপ্রিম কোর্টের কাছে নয়। সে কারণে সরকার বেগম জিয়ার জামিন বিষয়ে বিলম্ব ঘটাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে নূন্যতম কোন গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। গণতান্ত্রিক কোন পরিবেশও নেই। গণতান্ত্রিক অধিকারও নেই কারও। আমার বাড়িতে নেতাকর্মীরা দেখা করতে আসলে তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন এই ফ্যাসিবাদ। এটা স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী আচরণ ছাড়া আর কিছুই না।

নিজেকে অবরুদ্ধ অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এখনও অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা আমাকে বাড়ি থাকতে। তারা আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। গত তিন দিনে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা আসছে আমার সাথে দেখা করতে। পুলিশ অনেককে বাধা দিয়ে আমার বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমার সাথে দেখা করে যাওয়ার সময় আমার বাড়ির দরজা থেকে অনেককে গ্রেফতার করেছে। এ পর্যন্ত ২৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে আমার সাথে দেখা করতে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের ১১ জনকে আটকের পর আবার ছেড়ে দিয়েছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন পুরাতন মামলায় তাদেরকে জেলে পাঠানো হচ্ছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।

বিএনপির দাবির কথা উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, বিএনপির বর্তমান দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি। এছাড়া নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে, এ সংসদ রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন হওয়াটা নজিরবিহীন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি অথর্ব, অযোগ্য, অক্ষম এবং একটি লেজুড়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোন অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন হতে পারে না। সেটা তারা প্রমাণ করে দিয়েছে পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দিয়ে।

মওদুদ আহমদ আরো বলেন, বর্তমানে রাজনীতি এত নিচু পর্যায়ে চলে যাবে তা আমি আশা করিনি। যতই অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন বিএনপির ওপর করা হোক না কেন। সরকারের চোখে বিএনপিকে নিষ্পেষিত করে দেয়া হচ্ছে, বিএনপি আর নেই। কিন্তু তারপরও বিএনপির সমালোচনা ছাড়া আওয়ামী লীগের রাতে ঘুম হয় না। বেগম জিয়ার সমালোচনা ছাড়া আওয়ামী লীগের কোন বক্তব্য সম্পূর্ণ হয় না। বিএনপিকে এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে যাতে আর কোন দিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। আওয়ামী লীগ ভেবে ছিল বেগম জিয়াকে যদি একবার কারাগারে নেয়া যায়, তাহলে আর বিএনপি থাকবে না। বর্তমানে বিএনপি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী। সরকার যে আশা করেছিল, সে আশা তাদের ভণ্ডুল হয়েছে। সরকার দেখেছে বিএনপি এখন আগের চেয়েও অনেক শক্তিশালী।

তিনি বলেন, গত ১০ বছরের অত্যাচার, নির্যাতন, দুঃশাসন, কুশাসন, অপশাসন এগুলো সব পুঞ্জিভূত একটি ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে এবং সেটা বেগম জিয়ার মুক্তির মধ্য দিয়েই ঘটবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮শ কোটি টাকার উপরে চুরি হয়ে গেছে। একটা লোকও গ্রেফতার হলো না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা তামা হয়ে গেছে, এখানে কাউকে সন্দেহ করা গেল না। দেড় লক্ষ টন কয়লা চলে গেল, আড়াই লাখ টন খনিজ পাথর চুরি হলো, কেউ গ্রেফতার হয়নি। এটাতে প্রমাণ করে এ সরকারের কোন জবাবদিহিতা নেই। এ সরকার গভীরভাবে দুর্নীতির সাথে জড়িত এবং তাদের নিজস্ব লোকজন এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত। এজন্য দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। আমরা এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে এ সকল দুনীতির কোন ব্যাখ্যা পেলাম না। এতগুলো ঘটনার পরও কেন এখন পর্যন্ত একটা লোককেও গ্রেফতার করা হলো না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ১/১১ এর গন্ধ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এর সুবিধা ভোগকারী আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা তখনকার সময় বলেছিলেন, ১/১১ আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল। তখন সম্পূর্ণভাবে আমরা নিপীড়িত অবস্থায় ছিলাম। আমিসহ আমাদের নেতৃবৃন্দ কারাবন্দী অবস্থায় ছিল।

মওদুদ আরো বলেন, ১/১১ সরকার শেখ হাসিনাকে যখন আমেরিকায় যাওয়ার অনুমতি দিল, যাওয়ার আগে তখন তিনি বলেছিলেন, এ সরকারের যাবতীয় সব বেআইনি কার্যক্রমের সংবিধান সম্মত করে দেব। এ সব বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য হাস্যকর। যদি ১/১১ ঘটনার জন্য কেউ দায়ী থাকে, একমাত্র দায়ী হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগই লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে ১/১১ এর ক্রেডিট নিয়েছিল। তখন তারা বলেছিল তাদের আন্দোলনের ফসল। এ সবগুলোর সত্যতা, তথ্যভিত্তিক প্রমাণাদি থাকার পরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ওবায়দুল কাদের এখন আবল-তাবল বকছে।

এদিকে রোববার দুপুরে মওদুদ আহমদের বাড়ি দরজা থেকে কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বিএনপির ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো, আবদুল লতিফ মাস্টার, হাফিজ উল্যাহ, কামরুল ইসলাম, শাকিল, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ধনু মিয়া ও মো. ওলি উল্যাহ।