হৃদরোগ-স্ট্রোকেই মানুষ মরছে বেশি

শীর্ষ ১০ কারণের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অন্যতম

২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী ৫৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে ৫৪ ভাগ অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পেছনে রয়েছে ১০ কারণ। কারণগুলোর মধ্যে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকেই মারা যায় ১৫ দশমিক ২ মিলিয়ন লোক।

অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী মানবমৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের অন্যতম প্রধান হল হৃদরোগ ও স্ট্রোক। বিগত ১৫ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে এ দুটি রোগ শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।

অন্য কারণগুলো হল- শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ, শ্বাসযন্ত্রের নিুাংশের ইনফেকশন, আলঝেইমার্স জাতীয় রোগ, ব্রংকাইটিস ও লাং ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, সড়ক দুর্ঘটনা, ডায়রিয়া এবং যক্ষ্মা। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ক্রনিক অবসট্রাক্টিভ পালমোনারি রোগে (শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ) ৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়।

তবে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং ব্রঙ্কস ক্যান্সারসহ আরও ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে। ডায়াবেটিসে ২০১৬ সালে ১ দশমিক ৬ মিলিয়নেরও বেশি লোকের মৃত্যু ঘটে।

তবে ২০০০ সালে এ সংখ্যা ১০ লাখেরও নিচে ছিল। অর্থাৎ ৬ বছরে ডায়াবেটিসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ সবচেয়ে মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। এর কারণে ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী ৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়।

২০০০ ও ২০১৬ সালের মধ্যে ডায়রিয়া রোগের মৃত্যুহার প্রায় ১ মিলিয়ন হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ২০১২ সালে এ রোগে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়।

যক্ষ্মায় মৃতের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কমলেও শীর্ষ ১০ কারণের মধ্যে এখনও রয়েছে এ রোগটি। এছাড়া পৃথিবীতে যে দশটি রোগে বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয় তার মধ্যে এইচআইভি বা এইডস রয়েছে।

২০১৫ সালে এক মিলিয়ন মানুষ এ রোগে প্রাণ হারায়। যদিও ২০০০ সালে এ রোগে মারা যায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারায়। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ বা ৭৪ শতাংশই ছিল পুরুষ ও শিশু।

আর্থিক অসচ্ছলতাও মৃত্যুর একটি কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। ২০১৬ সালে নিু আয়ের দেশগুলোতে তথাকথিত আই গ্রুপের (আর্থিকভাবে অসচ্ছল) অর্থাৎ স্বল্প আয়ের মানুষের মৃত্যু ঘটে অর্থাভাবে।

বিশেষ করে সংক্রামক রোগ, গর্ভাবস্থায় জটিলতা, প্রসবকালীন সময়ে সৃষ্ট জটিলতা এবং অপুষ্টিজনিত কারণে এসব মৃত্যু হয়। বিপরীত দিকে উচ্চ আয়ের দেশে এসব রোগে মৃত্যুর হার ৭ ভাগেরও কম।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৭১ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ বা এনসিডিতে (নন কমিউনিকেবল ডিজিজ)।

উচ্চআয়ের দেশগুলোতে এসব রোগে মৃত্যুর হার ৩৭ শতাংশ থেকে কম হলেও স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে এসব রোগে মৃত্যুর হার ৮৮ শতাংশ।

যদিও উচ্চআয়ের দেশগুলোতে মৃত্যুর দশটি প্রধান কারণের মধ্যে একটি হল এনসিডি। মোট মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী ৭৮ শতাংশ মৃত্যু ঘটে অসংক্রামক রোগে।

যার বেশিরভাগই নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সংঘটিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে দুর্ঘটনায় ৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারায়। এই মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ বা ২৯ শতাংশ ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়।

প্রতি ১০০ হাজার জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৪ জন মৃত্যুর সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পৃক্ত। নিম্ন মধ্যম এবং উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে মৃত্যুর ১০টি প্রধান কারণের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অন্যতম।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আমাদের দেশেও মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্ট্রোক।

তিনি বলেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হয়েছে। ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড ইত্যাদির প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে। এসব কারণে হৃদরোগ এবং স্ট্রোক অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।

অধ্যাপক কনক বলেন, এছাড়া ক্যান্সারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ একই সূত্রে গাঁথা। তবে যুবকদের মৃত্যুর ৪০ শতাংশই ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়।

তিনি অপরিণত বয়সে মৃত্যু রোধ করতে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।