বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল জব্বারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে প্রয়াতের পরিবার ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দরাজ ও দরদী কণ্ঠের অধিকারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৯ বছর বয়সে মারা যান।

আব্দুল জব্বারের গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়..’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে..’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়.., এ গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল।

সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি বঙ্গবন্ধু পদক (১৯৭৩), একুশে পদক (১৯৮০),স্বাধীনতা পদক (১৯৯৬), জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস আজীবন সন্মাননা, সিটিসেল-চ্যানেল আই সংগীত পুরস্কারসহ জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন্ পদক ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।

শিল্পী আব্দুল জব্বারের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী বুধবার জানান, বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরাস্থানে অবস্থিত আব্দুল জব্বারের কবরে প্রয়াতের পরিবারের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এছাড়া এদিন বাদ আসর প্রয়াতের স্ত্রী হালিমা জব্বারের ভুতের গলির বাসভবন এবং আরেক স্ত্রী শাহিন জব্বারের কারওয়ান বাজারের বাসভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

আশরাফ আলী আকন বলেন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদের পক্ষ থেকে কাল বিকেলে সংগঠনের বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক পরিষদ এ উপলক্ষে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীতে এক আলোচনাসভা ও শিল্পী আব্দুল জব্বারের গান পরিবেশনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। ওস্তাদ ওসমান গণি ও ওস্তাদ লুৎফুল হকের কাছে তিনি সঙ্গীতে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে প্রথম রেডিওতে এবং ১৯৬৪ সালে টিভিতে প্রথম কন্ঠশিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন ও স্থায়ী শিল্পী হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন।

শিল্পীর সংগীত জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অবদান হচ্ছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান। অসংখ্য কালজয়ী গানে কণ্ঠ দেয়া এ শিল্পী মুক্তিযুদ্ধের সময় কাঁধে হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে গেরিলাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে উদ্দীপনামূলক গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং জনগণকে উজ্জীবিত করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত সালাম সালাম হাজার সালাম, জয় বাংলা বাংলার জয় সহ অনেক উদ্বুদ্ধকরণ গানের গায়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৭১ সালে তিনি মুম্বাইয়ে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

দেশের মানুষের ভালবাসার এ শিল্পী সঙ্গীতের নানা ঘরানার কয়েক হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এর মধ্যে দুই শতাধিক চলচ্চিত্রের গানও রয়েছে। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- সালাম সালাম হাজার সালাম, ওরে নীল দরিয়া, তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়, আমি তো বন্ধু মাতাল নই, বিদায় দাও গো বন্ধু তোমরা, দু’জাহানের মালিক তুমি, এ আঁধার কখনও যাবে না মুছে, এক বুক জ্বালা নিয়ে, কি গান শোনাব ওগো বন্ধু প্রভৃতি গান।

দরাজ ও দরদীকণ্ঠের অধিকারী এ শিল্পী আধুনিক বাংলা গানের বিভিন্ন পর্যায়ে সাড়ে পাঁচ দশক মানবপ্রেম, ভালবাসা, লোকজ, দেশাত্ববোধক, মরমী, দ্রোহ, বিষাদ, প্রতিবাদী, উদ্দীপনা, চলচ্চিত্র, ভক্তিমূলকসহ নানা ধরনের গান গেয়ে সংগীত জগতের এক কিংবদন্তি শিল্পীতে পরিণত হন।