যশোরে পলিথিনে মোড়ানো লাশটি চৌগাছার সাথীর

যশোরে সরকারি সিটি কলেজ থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হওয়া লাশটি সাথী আক্তারের (২৬)। সাথী যশোরের চৌগাছা উপজেলার নায়ড়া গ্রামের আমজেদ আলীর মেয়ে এবং একই উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী।

বুধবার মধ্যরাতে কলেজের মসজিদের পাশে হাত-পা বাঁধা এবং পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উদ্ধার হলেও বৃহস্পতিবার রাতে ওই তরুণীর বাবা আমজেদ আলী তার পরিচয় শনাক্ত করেন।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে যশোর কোতোয়ালি থানায় আসেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার নায়ড়া গ্রামের আমজেদ আলী।

তিনি এসে মেয়ের বর্ণনা দিয়ে জানান, প্রায় দেড় মাস আগে তার মেয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

আমজাদ আলী বলেন, ১০ বছর আগে সাথীকে চাঁদপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। তাদের ইয়াসিন নামে ৫ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।

সম্প্রতি সাথীর স্বামী গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকে চাকরিরত এলাকার এক যুবকের সঙ্গে সাথীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সাথীর স্বামী চৌগাছা থানায় অভিযোগ করেন।

ওই থানার এএসআই আবদুল আলিম বিষয়টি মীমাংসাও করে দেন। কিন্তু মীমাংসার পরদিনই সাথী বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে স্বামীর বাড়ি থেকে রওনা হন। এরপর আর তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে সাথীর বাবা আমজাদ আলী বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় একটি জিডিও করেছিলেন। কিন্তু দেড় মাসেও সেই জিডির কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

বৃহস্পতিবার টেলিভিশনের সংবাদ ও ছবি দেখে সাথীর পরিবার কোতোয়ালি মডেল থানায় আসেন। তাদের কাছে থাকা ছবির সাথে পুলিশের তোলা লাশের ছবি মিলিয়ে আমজাদ আলী নিশ্চিত হন নিহত তরুণী তার মেয়ে সাথী আক্তার।

এদিন রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অপূর্ব হাসান সাথীর বাবা আমজাদ আলীকে সাথে নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। সেখানেও তিনি লাশটি তার মেয়ে সাথীর বলে সনাক্ত করেন।

তবে বৃহস্পতিবারে দাফন হওয়া সাথীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে নেয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন আমজাদ আলী। এবিষয়ে তিনি বাদী হয়ে মামলাও করতে রাজি হননি। সে কারণে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে মামলা দায়ের করা হবে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার রাত ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পলিথিনে মোড়ানো মানুষের মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। ওই তরুণীকে খুন করে হাত-পা বেঁধে পলিথিনবন্দি করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকদিন আগে অন্য কোথাও হত্যা করে হতভাগ্য তরুণীকে কলেজ ক্যাম্পাসে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা। মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। তবে কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড আর এর সঙ্গে কারা জড়িত তা পুলিশ এখনো জানতে পারেনি।

রাত ২টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার নিহত তরুণীর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর বিকাল পর্যন্ত তার কোনো পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় লাশটি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকালেই সংগঠনটি লাশ দাফন সম্পন্ন করে।