নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন ভোটারদের কাছে টানার কৌশল আওয়ামী লীগের

তরুণ সমাজ ও নারী ভোটাররাই একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হতে পারে— এমনটাই ভাবছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মতো এবারও তরুণ ভোটারদের টার্গেট করেছেন ক্ষমতাসীনরা। তরুণ ও নারী ভোটারদের মন জয় করার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহার। কর্মসংস্থানসহ তরুণদের উপযোগী নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনের আগেই কোটা সংস্কারের সমাধান করা হচ্ছে। বিগত দুটি নির্বাচনের মতো এবারও দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে তরুণ এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১। এর মধ্যে নতুন ভোটার দুই কোটি ৩০ লাখের বেশি। এ তরুণ ভোটাররা আওয়ামী লীগের আমলেই প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছেন। এদের মধ্যে নারীও রয়েছেন প্রায় সমান সংখ্যক। নতুন ভোটারদের টার্গেট করেই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিসহ নির্বাচনী কৌশল নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। যারা প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছেন তাদের অনেককে স্থানীয় পর্যায়ে দলের সদস্য পদ দেওয়া হচ্ছে। নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সরকার যে ১০০টি শিল্পাঞ্চল করছে, তাতে কোটি যুবকের কর্মসংস্থান হবে। এটাও আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের সুযোগ বলে মনে করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমাদের টার্গেট তরুণ ও নারী ভোটার। যেসব তরুণ ফার্স্টটাইম ভোটার হলেন এবং বিশেষ করে যে নারীরা প্রথমবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন আমরা তাদেরকে দলের সদস্যপদ দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যুব সমাজ ও নারীদের জন্য অনেক কাজ করেছে, আগামীতেও করবে। সে অনুযায়ীই আমাদের ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। অতীতেও যেমন তরুণরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল, একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তাই করবে। তাদের ভোটেই আমরা জয়ী হব।’

জানা গেছে, আগামী সপ্তাহ থেকে আবার জেলা সফরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সফরকালে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে তরুণদের জন্য আওয়ামী লীগ কী কী করেছে, সেসব তাদের সামনে তুলে ধরা হবে। এ সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে আগামীতে তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান সৃষ্টির। তরুণ সমাজের জন্য নানামুখী করণীয়। নবম সংসদের আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এবার নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের জন্য আলাদা চমক রাখবে ক্ষমতাসীন দল।

দলটির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, তরুণদের কাছে টানতে পারলেই আগামীতে আবারও ক্ষমতায় আসবেন তারা। তাদের মতে, নতুন ভোটাররা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, দেশ গঠনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবদান, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিষয়গুলো শ্রেণিভিত্তিক পড়াশোনা করে জেনেও এসেছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এখন বিষয়গুলো তাদের কাছে কেবল নতুন করে উপস্থাপন করছে। অন্য দিকে মাঠের বিরোধী বিএনপিসহ তাদের সমমনাদের সহিংস রাজনীতি, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পরবর্তীতে তাদের ভূমিকা সবই জানে দেশের তরুণ সমাজ। সে কারণে তরুণরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করি। দেশের তরুণসমাজ তা গ্রহণ করে আমাদের ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে। আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। এটা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত অনেক বিদ্রূপ করত। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। এর সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমরা তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুনত্ব নিয়ে আসব। কারণ তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তারা যেদিকে যাবে, গণরায় সেদিকেই প্রভাব ফেলবে। আমরা আশা করব, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের টানা উন্নয়নে দেশের তরুণসমাজ আবারও নৌকায় আস্থা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, ‘যারা প্রথমবার ভোট প্রয়োগ করবেন বিশেষ করে তরুণ ও নারী ভোটাররাই হবেন জয়-পরাজয়ের অন্যতম ফ্যাক্টর। আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই তারা ভোটার হয়েছেন। আর আমরা তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। এ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পড়ে এসেছে। তারা মুুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গেই থাকবে। কারণ শেখ হাসিনার সরকার মানেই উন্নয়ন, সমৃদ্ধি। আর অন্যরা ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের অর্থ লুটপাট, বিদেশে পাচার, রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করা।’

সূত্রমতে, দেশের তরুণ ভোটারদের টার্গেট করে, তাদের মন জয় করতে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি তরুণদের নিয়ে ভাবছেন। তথ্যপ্রযুক্তির ভিতরে তাদের কীভাবে প্রবেশ করানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তরুণদের নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম করছেন। টেলিভিশনে তরুণদের নিয়ে মতবিনিময়, মুক্ত আলোচনাও করছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) তরুণ ভোটারদের টার্গেট করে ‘ইয়ং বাংলা’ প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। এর সঙ্গে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী সম্পৃক্ত। এ প্লাটফর্মের আওতায় তরুণদের উৎসাহিত করতে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হচ্ছে। এ অ্যাওয়ার্ড কর্মসূচিতে তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন এবং তাদের উৎসাহিত করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন