বিএনপির কাছে তিনটি প্রশ্নের ব্যাখ্যা চেয়েছেন কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি বিলকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি, বিনা খরচে পাওয়া সাবমেরিন কেবল প্রত্যাখান ও দলীয় গঠনতন্ত্র থেকে সাত ধারা বাতিলের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠক শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহবান জানান।

এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, ডা. দীপুমনি এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আব্দুর রহমান এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকার জনসভায় বিএনপি নেতা আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনের আগে বিএনপি কী চায় তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারকে কিছু বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

বিবিসি বাংলার কাদির কল্লোল বলছেন, বিএনপি নীতিনির্ধারকরা প্রধানত তিনটি দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন – খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে, নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করার আগে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

আমাদের সংবাদদাতা বলছেন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি খোলা ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চ থেকে বক্তৃতার সময় বিএনপি নেতাদের কণ্ঠে বেশ ‘আত্মবিশ্বাসের’ সুর শোনা গেছে।

বিএনপি নেতারা হুঁশিয়ার করেছেন, দ্রুত তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দেওয়া না হলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করা হবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকারর মোশাররফ হোসেন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আন্দোলনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।’

একইসাথে সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের ভাষণে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের তীব্র সমালোচনা করেন এবং কমিশন ঢেলে সাজানোর দাবি করেন। বিএনপির সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মীর সমাগম ছিল লক্ষণীয়। কাদির কল্লোল বলছেন, নয়া পল্টনে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে সড়কটি মানুষে ঠাসা ছিল।

সরকারের পক্ষ থেকে এই সমাবেশে বাধা তৈরির কোনো চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়নি। একজন সিনিয়র মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেছেন, সরকার চায়না নির্বাচনের আগে কোনো ইস্যু তৈরি করে রাজধানীতে কোন বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক। নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে ঐ মন্ত্রী বলেন, সংবিধানে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যা বলা আছে, সবকিছু সে মতই হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকারের পদত্যাগ ও কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছে দলটি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনা মোতায়েন করতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকারের মধ্যে এখন বিএনপি ভীতি কাজ করছে। এ ভীতি থেকে রক্ষা পেতে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ভাবছে ইভিএম তাদের রক্ষা করবে, কিন্তু জনগণ তাদের রক্ষা করবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে। জাতিকে মুক্তি দিতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব, গণতন্ত্রকামী সবাই নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হোন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করুন। কারণ দেশনেত্রী কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন এ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য। তাই আসুন সবাই ভেদাভেদ ভুলে একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করে এ দানবকে পরাজিত করি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে একদলীয় বাকশাল থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে বিএনপি গঠন করেছেন জিয়াউর রহমান। যেভাবে ১৯৭১ সালে জাতির ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, আজ আবার সেই গণতন্ত্র সংকটের মুখে আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনের কারণে।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহাসচিব বলেন, আমাদের আজ বুকে সাহস নিয়ে, বুকে বল নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আজকের জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে আজ বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বুকের রক্ত দিতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, দেশকে মুক্ত করতে হবে। যারা দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের রক্ত ছুয়ে শপথ নিতে হবে আমরা দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করব, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।

খালেদা জিয়াসহ কারাগারে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা বাতিল করতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

ফখরুল বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাঁকে সাজা দিতে চাইছে। রায়ের আগে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিচ্ছেন, এ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হবে। তাহলে কি আপনারা আগেই গণভবনে রায় লিখে রেখেছেন। মনে রাখবেন, কোনো ষড়যন্ত্রের রায় দেশের জণগন মেনে নিবে না।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় আপনাদের নিতে হবে। দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে।

বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। সভা শুরুর আগেই সকাল থেকে দলের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে পুরো এলাকা।

সভা শুরু পর থেকেই বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা তাদের বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিকে দেশের মানুষের ভোট পেতে হলে জাতির কাছে ওই তিনটি প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে হবে। তা না হলে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকতে পারে না।

জাতীয় নির্বাচনে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে বিএনপির বিরোধিতার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহারে বিএনপির ভয় সম্পর্কে আমরা ধারণা করতে পেরেছি। কারণ এ প্রযুক্তিতে ভোট গ্রহণ করা হলে তারা (বিএনপি) কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপির আর কোন অভিযোগ আনতে পারবে না। তাই এ বিষয়ে তাদের এত ভয়।

নির্বাচনের আগে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির দাবি সম্পর্কে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি একান্তই আদালতের এখতিয়ার। এ বিষয়ে সরকারের কোন হাত নেই।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিচারে ও মুক্তির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ বেশ কিছু মামলায় জামিন হতো না।

নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির দাবির জবাবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, তাদের (বিএনপি) এই দাবি সংবিধান সম্মত নয়। অগণতান্ত্রিকভাবে জম্ম নেওয়া কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেই এ ধরণের দাবি করা সম্ভব।

আন্দোলন করে সরকার পতনে বিএনপির হুমকির জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি দশ বছরে একটি দিনও সরকারের ওপর কোন চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। দেশের ইতিহাসে বিএনপির মত আর কোন ব্যর্থ বিরোধী দল নেই। বিএনপি নেতাদের এ ধরনের ব্যর্থতার জন্য তাদের সকলকে একযোগে দল থেকে পদত্যাগ করা উচিত।