‘স্বপ্নের বিমান’ উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশ বিমানের বহরে যোগ হওয়া অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ‘ড্রিমলাইনার’ এর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ফ্লাইটটির বাংলা নামকরণ হয়েছে আকাশ বীণা।

বুধবার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানে এর উদ্বোধন করা হয়। ঢাকা-মালয়েশিয়া রুটে এই ফ্লাইটে যাত্রী বহন শুরু হচ্ছে আজই।

গত ১৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমানটি ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এখন বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫টিতে। এর মধ্যে ড্রিমলাইনার দিয়ে প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর ও ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। বিমানটির নামকরণ হয় প্রধানমন্ত্রীর পছন্দে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমান সরকারের আমলে বিমানের বহরে যেসব উড়োজাহাজ যোগ হয়েছে সেগুলোর নাম প্রধানমন্ত্রীই পছন্দ করেছেন। এগুলোর নাম রাখা হয়েছে যথাক্রমে পালকি, অরুণালোক, আকাশ প্রদীপ, রাঙাপ্রভাত, মেঘদূত, ময়ূরপঙ্ক্ষী।

আকাশবীণায় আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি এবং ২৪৭টি ইকোনমিক ক্লাস। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন।

টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগে।

প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। যাত্রা পথে সরাসরি নয়টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একই সঙ্গে ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে একশটির বেশি ক্লাসিক থেকে ব্লকব্লাস্টার সিনেমা।

ড্রিমলাইনারে যাত্রীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য রয়েছে ওয়াইফাই সুবিধা। এছাড়া আকাশে উড্ডয়নের সময় ফোন কল করতে পারবেন যাত্রীরা।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিমানের কর্মীদেরকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘কোনো বদনাম যেন না হয়, আমাদের দেশের যেন সুনাম হয়। বিদেশ থেকে যারা আসেন, দ্রুত তাদের মাল খালাস এবং নিরাপদে তারা যেন দেশে ফিরে যেতে পারেন সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আরও একটা ড্রিমলাইনার চলে আসবে আগামী নভেম্বরে। তখন নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে বলে আসতে পারবেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন হয়তো আসা সম্ভব হবে না। তবে আমি চাচ্ছি, এটা খুব দ্রুত এসে যাক এবং কাজ শুরু করুক। তাছাড়া আমরা কানাডার সঙ্গে চুক্তি করেছি, আরও তিনটা ড্যাশ-এইট উড়োজাহাজ আসবে। তাতে করে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক যোগাযোগটা আমরা আরও বাড়াতে পারব।’

বিমানের উন্নয়নে তার সরকারের নানা উদ্যোগের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে এই বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজ বলে কিছুই ছিল না। বিমানবন্দরে নেমে হেঁটে বিমানে উঠতে হতো। আমি সরকারে এসে এটির আধুনিকায়নের দিকে নজর দেই এবং উন্নত করার ব্যবস্থা নেই।’

‘কার পার্কিং, বর্ডিং ব্রিজ, সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এই সবগুলো কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেই হয়েছে।’

বিমানের বসে থাকলে প্রায়ই পানি পড়তো, টয়লেট টিস্যু বা তোয়ালে দিয়ে পানি আটকাতে হতো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কারণে সরকারে আসার পর পরই আমরা উদ্যোগ নেই। সেই উদ্যোগের ফলেই বিমান বহরে আজ নতুন নতুন আধুনিক বিমান সংযুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বিমানবন্দরও অনেক আধুনিক হয়েছে।’

বিমানের উন্নয়নে ভবিষ্যত পরিকল্পনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা এখন থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ করতে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে কক্সবাজার বিমানবন্দরটাকেও আমরা উন্নত করতে চাচ্ছি। এটাও যেন একটা আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে ওঠে।’

সৈয়দপুর, সিলেট চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকেও উন্নত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে বাগেরহাটের খান্দাইল বিমানবন্দর করার কথা জানান তিনি।