৮৬ বছরের প্যারালাইসিস রোগী নাশকতা মামলার আসামি!

বগুড়ায় একটি নাশকতা মামলায় ৮৬ বছর বয়স্ক শয্যাশায়ী এক প্যারালাইসিস রোগীকে আসামি করেছে পুলিশ। মামলায় আবদুল খালেক সরকারের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৩৮ বছর। ধুনট থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের আওতায় ৭ই সেপ্টেম্বর এ মামলা করে পুলিশ।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ৭ই সেপ্টেম্বর উপজেলার কান্তনগর বাজারে মাদকবিরোধী অভিযান ও থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ডিউটিতে আসে থানা পুলিশ। এ সময় নিমগাছী ইউনিয়নের নান্দিয়ারপাড়া রহমানিয়া সিনিয়র মাদ্‌রাসার পিছনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠকে নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে খবর পেয়ে রাত ৮টায় অভিযান চালায় থানা পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের নান্দিয়ারপাড়া গ্রামের মৃত মোবারক আলী সরকারের ছেলে আবদুল খালেক সরকারের বয়স ৮৬ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্যারালাইসিস রোগী। প্যারালাইসিস রোগী হিসেবে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে ৩১শে জুলাই থেকে ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।

কিন্তু হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও তিনি সার্বক্ষণিক শয্যাশায়ী। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবদুল খালেক সরকারের পরিবার। ওই মামলায় আরো ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিমগাছী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মশিউর রহমান মোল্লা জানান, পুলিশ কার নামে মামলা দিচ্ছে তার বর্তমান অবস্থা কি এসবের কোনো তোয়াক্কা করছে না। ইচ্ছামতো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্য মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

এদিকে নতুন করে মামলার জালে আটকে পড়ছে বগুড়া বিএনপি। গেল এক সপ্তাহে ছয় উপজেলায় দায়ের হয়েছে নতুন ১১টি মামলা। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে আরো শ’পাঁচেক নেতাকর্মীকে। সবগুলো মামলাই পুলিশের পক্ষ থেকে করা করা হয়েছে। নাশকতার পরিকল্পনা, ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে এসব মামলায়।

এমন এক মামলায় ৮৬ বছরের প্যারালাইসিস রোগীর নামও যুক্ত করা হয়েছে আসামির তালিকায়। কেবল তাই নয়, ছয় বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী, পবিত্র হজপালন শেষে এখনও দেশে ফেরেননি এসব ব্যক্তির নামও পাওয়া গেছে আসামির তালিকায়। ফলে মামলাগুলো নিয়ে বিএনপি’র পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানামুখী প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের নির্দেশে বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের নামে এসব মামলা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে বসবাসকারী বিএনপি-জামায়াতের প্রভাবশালী নেতাদের নির্বাচনের আগে কারাবন্দি করার ফন্দির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব মামলা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপি’র।

নাশকতার অভিযোগে একই রকম তিনটি মামলা হয়েছে বগুড়া সদর থানায়। এতে সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সদরে আরো দু’টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারের নাম উল্লেখ আছে। মামলা হয়েছে গাবতলী উপজেলাতেও। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিল্টন, পৌরচেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবুল বাশার, তালোড়া বিএনপি’র সভাপতি আবুল হোসেন সরকার, তালোড়া পৌরচেয়ারম্যান বেলাল হোসেন। এসব মামলায় কমপক্ষে ৫ শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরো ৫ শতাধিক নেতাকর্মীর নাম দেয়া হয়েছে বলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল বলেন, ‘বগুড়া সদরে আবার শুরু হলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা। সদর উপজেলা বিএনপি’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক গোকুল ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আইউব খানকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় জেলে থাকলেও মামলা হওয়ার মতো কোন কর্মসূচি বিএনপি দেয়নি। পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই এসব মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তার দৃষ্টিতে এসব গায়েবি মামলা। বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির লক্ষেই আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে পুলিশ’। আমরা একটি সুস্থ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে চাই। দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাবার জন্য কাজ করতে চাই’।

কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সম্পাদক ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, সারকার বিএনপি’র জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়েই মামলা মোকদ্দমা দিয়ে দমিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। তিনি মনে করেন এসব মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি’র গণতান্ত্রিক আন্দোলন থামাতে পারবে না। বিএনপি হারানো গণতন্ত্র উদ্ধার করেই ঘরে ফিরবে বলে তিনি জানান।