১১ বছর আগে মৃত ব্যক্তির নামেও সড়ক অবরোধের মামলা!

মিন্টু কুমার দাস। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে রাজারবাগ ইউনিট বিএনপির সভাপতি ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ১১ বছর আগে ২০০৭ সালের ২৩শে জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সে অনুযায়ী মৃত্যু সনদও নিয়েছে পরিবার। তবে পল্টন থানা পুলিশের দায়ের করা মামলায় তিনি এখনও জীবিত। গত ১১ই সেপ্টেম্বর তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সড়ক অবরোধ করছিলেন। এ সময় যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়া বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মিন্টু দাসকেও আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় তার ভাই পিন্টু দাসও আসামি।

পুলিশের এজাহারে মিন্টু কুমার দাসের ঠিকানায় উল্লেখ করা হয়েছে- তার বাবার নাম বিনোদ কুমার দাস। ১২, শাহপরান ভিলা, চামেলিবাগ, শান্তিনগর, থানা-পল্টন, ঢাকা। তবে সেই বাসায় গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেশীরা জানান, প্রায় ১২ বছর আগে তারা ওই বাসায় থাকতেন। পরে যোগাযোগ করা হয় মিন্টু কুমার দাসের ভাই পিন্টু কুমার দাসের সঙ্গে।

পিন্টু কুমার দাস বলেন, ওই মামলায় আমি ২০ নম্বর আসামি। আর ভাই মিন্টু কুমার দাস ২৬ নম্বর আসামি। আমরা ঢাকায় স্থানীয়। ২০০৭ সালের ২৩শে জুলাই সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে আমার ভাই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি হেপাটাইটিস বি ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ওই সময় তিনি রাজারবাগ ইউনিট বিএনপির সভাপতি ও তৎকালীন ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। বিয়ের আগেই তিনি মারা যান।

পল্টন থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১১ই সেপ্টেম্বর মামলাটি করেন। মামলা নম্বর-২৩। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে- ১১ই সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এই ঘটনায় পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা এবং এর আশপাশ এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সড়কে আটকা পড়ে হাজার হাজার গাড়ি। সড়ক অবরোধের কারণে ওই এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই হেঁটে গন্তব্যস্থলে রওনা দেয়।

এজাহারে বলা হয়েছে, পল্টন থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম ওয়াকিটকির মাধ্যমে খবর পেয়ে কয়েকজন কনস্টেবলকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় বিএনপি ও ২০ দলীয় নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

মিন্টু কুমার দাস ও পিন্টু কুমার দাস ছাড়াও ওই মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক এমএ মালেক, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, শহীদুল ইসলাম বাবুল, কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও বেলাল আহমেদ, কণ্ঠশিল্পী মনির খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন, অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ, শেখ মো. শামীম, অ্যাডভোকেট ফেরদৌসী আক্তার ওয়াহিদা, সাবেরা আলাউদ্দিন ও কাজী মফিজুর রহমান, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করীম ও পল্টন থানা ছাত্র শিবিরের নেতা আহমেদ ইয়াসিনসহ মোট ৫৫ জন।

এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞতনামা আসামিও করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর এজাহারে উল্লিখিত এলাকায় কয়েক দফা অবস্থান করে বিভিন্ন জনের কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। ওই এলাকার কেউ সেদিনের অবরোধের কোনো তথ্য দিতে পারেননি। সড়কের দুই পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ওই দিন স্বাভাবিক ছিল এলাকার পরিস্থিতি। পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়কে প্রায় সমই যানজট থাকে। যানজটের কারণে পুরো সড়কেই যানবাহন আটকে থাকে।

মামলার আসামি বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, এটা গায়েবি ও হাস্যকর মামলা। পুলিশ তাদের ইচ্ছা মতো আমাদের হয়রানি করার জন্য এমন মামলা দিচ্ছে। এই মামলায় যেমন ১২ বছর আগে মারা যাওয়া মিন্টু কুমার দাস আসামি হয়েছে তেমনি আসামি করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামকেও। যিনি দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে স্বাভাবিক চলাচলে অক্ষম। রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসামিদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। মামলার এজাহারে মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে এ বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানসহ বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে মামলার আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারে কোনো মৃত ব্যক্তি থাকলে তা বাদ দেয়া হবে।সূত্র: মানবজমিন