তিন লক্ষ্যে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ

এগিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য তিনটি লক্ষ্য সামনে নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।

প্রথমত, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ছোট ছোট সবগুলো দলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত, এসব দল নিজেদের অনুকূলে নিয়ে এসে বিএনপি ও জামায়াতকে ‘একঘরে’ করে দেওয়ার মাধ্যমে আরও বেকায়দায় ফেলা এবং তৃতীয়ত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরি করতে না দেওয়া।

ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অংশগ্রহন করেনি। জামায়াত ছাড়াও নিবন্ধিত ৪১টি দলের মধ্যে শুধু ৭টি দল অংশ নেয় এবং ৩শ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনেই একাধিক প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ১৫৪ জন সংসদ সদস্য।

এসব লক্ষ্য সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এ ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট, বিকল্পধারা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য নিয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরামসহ বেশকিছু দল মিলে ‘জাতীয় ঐক্য’ গঠনের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে, এর পাল্টা হিসেবে ‘বিকল্প জাতীয় ঐক্য’ করতে চায় আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে নতুন গঠিত ঐক্য যে জাতীয় ঐক্য নয়, সরকারবিরোধী সম্মিলিত একটি প্লাটফর্ম মাত্র এই বার্তাও দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চান শাসক দলের নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক বা না করুক, আওয়ামী লীগের মূল ভাবনা হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের। বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে ৪১টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৭টি দলের।

এত অল্পসংখ্যক দল নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেও বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তাই দলটির নীতিনির্ধারকরা আসন্ন নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক দলের অংশগ্রহণ দেখতে চান। এ জন্য ছোট ছোট দলের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন সরকারি দলের নেতারা বিএনপি ও জামায়াত এ দুটি দল ছাড়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করবে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি ছাড়াও ছোট ছোট অনেক জোট জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। মূলত এসব বিষয় নিয়েই নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে দরকষাকষি করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে গতকাল বলেন, ‘বিএনপি না এলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব নেই। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরির কোনো সুযোগ নেই। এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।’

আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতোমধ্যে জোটের খেলা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে এ ধরনের নির্বাচনী জোটকে স্বাগত জানালেও আড়ালে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আরও একাধিক জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের বাইরে নতুন জোট হিসেবে রাজনীতির মাঠে আলোচনায় রয়েছে ড. কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম রব প্রমুখের নেতৃত্বে গঠিত জোট। এ জোটের লক্ষ্য দেশে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠা।

তবে জামায়াতের প্রতি আপত্তি থাকায় ২০-দলীয় জেটের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনদের গঠন করা নতুন জোট যূথবদ্ধ হবে কিনা, তা বুঝতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এই তিনটি জোট ছাড়াও আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আরও কয়েকটি জোট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে ইসলামিক গণতান্ত্রিক জোট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিএনএ অন্যতম। তিনটি জোটের মধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃত্বে রয়েছে সিপিবি ও বাসদ। বাকি দুটি জোটের নেতৃত্বে তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এমএ আউয়াল ও বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা থাকলেও জোট দুটির মূল লক্ষ্য একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহযোগী হওয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে জোট গঠন করতে দেখা যায়। কারণ ছোট ছোট রাজনৈতিক দল, যেগুলো এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারে না, সেসব দলের নেতারা চান জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় শরিক হতে। এবারও নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জোট দেখা যাচ্ছে এটা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন দল থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে আমাদের জোটে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে।’ সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়