মাহী-কাণ্ডে শুরুতেই লেজেগোবরে জাতীয় ঐক্য!

ঘোষণাপত্র নিয়ে শুরুতেই লেজেগোবরে করে ফেলেছে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। ঘোষণাপত্রের একটি শব্দ নিয়ে যাত্রার শুরুতেই তালগোল পাকিয়েছেন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো এই জাতীয় ঐক্যের নেতারা। আর নেপথ্যে থেকে এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের অন্যতম নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা (বি) চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরী।

এনিয়ে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণাপত্রের জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও যোগ দেননি বি চৌধুরী। অসুস্থতার কথা বলে মাঝপথ থেকে বাসায় ফিরে যান তিনি। ওই সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিবকেও পাঠানো হয়নি। সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতিনিধিত্ব করছেন বলে জাতীয় ঐক্যের নেতারা জানান।

ঘোষণাপত্রে ‘প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ’ স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের কথা বলা হয়েছে। ‘পরোক্ষ’ শব্দটি নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ায় মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। ‘পরোক্ষ’ বলতে দৃশ্যত বিএনপিকে বুঝানো হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী। ফলে জাতীয় ঐক্যে চাইলেও বিএনপির অংশগ্রহণের রাস্তা এতে বন্ধ হয়ে গেল। যুক্তফ্রন্ট ও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টরা ঘরোয়াভাবে এনিয়ে আপত্তি জানালেও প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।

গোটা বিষয়টির জন্য বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর বাড়াবাড়িকে দায়ী করছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। এনিয়ে বাবা বি চৌধুরীর সঙ্গেও মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী পরোক্ষ দল বলতে কাদের বুঝোনো হয়েছে তা স্পষ্ট না হলে ঐক্য প্রক্রিয়া বেশিদূর এগোবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা মনে করেন, মাহী বি চৌধুরী ‘ব্যক্তিগত আক্রোশে’ ওই শব্দ দুটি যুক্ত করেছেন। আর এর প্রমাণ আগের দিনই জাতীয় ঐক্যের ঘোষণাপত্র বিকল্পধারার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ আকারে পাঠানো। এর মাধ্যমে মাহীর বিশেষ কোনো ‘ইনটেশন’ প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট নেতাদের অভিযোগ, তাদেরকে না জানিয়েই এই শব্দ দুটি ঘোষণাপত্রে জুড়ে দেয়া হয়েছে। যার কারণে জাতীয় ঐক্যের সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পড়ার সময় এই শব্দ দুটি উচ্চারণ করা হয়নি।

তাদের প্রশ্ন, এত বড় ভুল কিভাবে হয়? ঘোষণার আগেই ঘোষণাপত্র মিডিয়ায় কিভাবে চলে গেল? ঐক্য প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেই বি চৌধুরী, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও মাহী বি চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে না এসে মাঝপথ থেকে বি চৌধুরীর ফিরে যাওয়ার ঘটনাকে তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন।

তবে কেউ কেউ মনে করছেন, নিজের ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশা থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিংবা ঐক্যের নেতাদের প্রশ্ন এড়ানোর টেনশনে তার রক্তচাপ কমে যাওয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে তিনি অনুষ্ঠানে যোগদান থেকে বিরত থেকেছেন।

জাতীয় ঐক্যের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বাবা-ছেলের এই মতপার্থক্য জাতীয় ঐক্যে নিয়ে শুরুতেই জনগণের মাঝে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে বিষয়টি প্রশমিত করার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। ‘অসুস্থ’ বি চৌধুরীকে দেখতে তার বাসায় ছুটে যাচ্ছেন তারা। যে কোনো উপায়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য এসব নেতারা নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবে ঘোষণাপত্র পাঠ করার সময় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এই শব্দ দুটি উচ্চারণ করেননি। ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতারা জোটগতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি হয়তো এই শব্দ দুটি এড়িয়ে গেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বাবা-ছেলের মধ্যে মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব আছে বলে আমরা নজরে পড়েনি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী- এটা নিয়েও কোনো সমস্যা নেই, লেখার মধ্যে হয়ে গেছে।’ সূত্র: পরিবর্তন ডটকম