মৃতরাও আন্দোলন করছে!

শুধু জীবিত ব্যক্তিরাই নয়, মৃত ব্যক্তিরাও এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের করা গায়েবি মামলা প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ১০ বছর আগে যিনি মারা গেছেন, তাঁর নামে মামলা হয়েছে। দেড় বছর আগে মারা গেছেন, তিনিও পুলিশের ওপর হামলা করেন। যিনি দুই বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন তাঁর নামেও মামলা হয়েছে। গত আগস্ট মাসে মারা গেছেন যিনি, তিনি নাকি সেপ্টেম্বরে পুলিশকে আক্রমণ করেছেন। মৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণ করে, যারা জীবিত আছে তারাই শুধু এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে না, যারা মারা গেছে তারাও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে!

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত সংহতি সমাবেশে এসব কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা যখন মিটিং মিছিল করি, পুলিশ দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায় যাতে কোনো ঝামেলা না হয়। এখন দেখা যাচ্ছে কবরস্থানেও পুলিশ মোতায়েন করতে হবে যাতে কেউ কবরস্থান থেকে উঠে এসে আন্দোলন করতে না পারে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত কয়েকদিনে কয়েক হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে। কি অদ্ভুত একটি দেশ, এই দেশের জন্যই কি মুক্তিযুদ্ধ করলাম? পত্রিকায় এসেছে পরিবেশ দূষণে মৃত্যুর হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ এই দেশে। কিন্তু এই হিসাব কেউ করে নাই যে, রাজনৈতিক দূষণে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। এই দূষণে গত কয়েক বছরে মারা গেছে কয়েক হাজার মানুষ। গত কয়েক দিনেই হাজার হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে, লাখ লাখ আসামি করা হয়েছে। আমাদের মিটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়, আমাদের কর্মীরা আসার সময় বা যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হন। মিটিংয়ে এলে তাদের ফিরে যাওয়ার উপায় থাকে না।

নজরুল ইসলাম খান অবিলম্বে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহার করে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের সামনে সচিব ও আইজি প্রিজনকে ডেকে এনেছেন, বলেছেন জেলকোড অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ড গঠন করতে। আমরা তাঁকে বললাম আপনারা যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন, সেখানে খালেদা জিয়াকে যাঁরা আগে চিকিৎসা দিয়েছেন তাঁদের কয়েকজনকে রাখেন। তিনি সম্মতিও দিলেন, কিন্তু যাদের রাখলেন তাদের মাঝে তিনজন আওয়ামী লীগের সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, চিকিৎসা তো একটা বিশ্বাসের বিষয়। আমাদের যারাই অসুস্থ হই, নিজের পছন্দের ডাক্তারের কাছে যাই। কারণ তাদের ওপর আমাদের আস্থা থাকে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যাদের দিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তাঁরা বলছেন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, আবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির কথাও বলছেন। যদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি না থাকে তাহলে হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ কেন করা হলো।

জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের নেত্রী কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন গণতন্ত্রকামী সব দল, সংগঠন ও ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করতে। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি। আজ ডানপন্থী, বামপন্থী, ইসলামিক অনেকে ঐক্য করছেন। আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। আমরা আনন্দিত এতে। আমরা আশা করি জনগণের স্বার্থে তারা দাবিগুলো পেশ করছেন। তাদের সাথে আমরা আন্দোলন করতে পারব। কারণ তারা যে দাবি নিয়ে ঐক্য করেছেন সেই দাবি আমরা দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছি। তারা আমাদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ঐক্য গঠন করেছেন।

জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, দুই একজন ব্যক্তি কী বলে, কেন বলে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। সেখানে কে কার সঙ্গে আলোচনা করে, কার পরামর্শে কী বলেন এসব বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কিছু নাই। এটুকু বলব যারা জনগণের দাবির বাইরে যাবে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এটা ইতিহাস, এটা নিয়ম। আপনি জনগণের দাবির সঙ্গে একমত না হয়ে নিশ্চিহ্ন হলে তার দায় আপনাদের। তাই আসুন, জনগণের দাবিতে একসাথে আন্দোলন করি।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জম হোসেন আলাল, যুবদলের সাবেক সভাপতি এলবার্ট পি. কস্তা, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফারুক রহমান, মো. মোসলেম উদ্দিন, এস এম ইউসুফ আলী, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব নুরুল ইসলাম সিয়াম, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমাউন কবীর, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব এস এম সালাউদ্দিন, অর্থ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট আল আমিন, মোহেবুল্লাহ মেহেদী ও ছাত্রমিশন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. মিলন প্রমুখ।