আদালতের নির্দেশনা উপক্ষো করেই চলছে বহুল বির্তকিত যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার মীর আবু মাউদকে সাথে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালান। বিভিন্ন অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনা প্রমাণ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক গোলাম ছরোয়ারের কাছ থেকে এক লাখ জরিমানা আদায় করেন। একই সাথে নির্দেশনা দেন প্রতিষ্ঠান সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভ্রাম্যমান আদালতে অভিযান শেষ হতে না হতেই যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ পুরোদমে ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। ২১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে রাত অবধি সেখানে রোগীর ভীড় ছিলো। প্যাথলজিক্যাল টেস্ট, আল্ট্রাসনো, এক্স-রে সকল কার্যক্রমই প্রতিষ্ঠানটি চালু রেখেছিলেন ওইদিন। শতাধিক মানুষকে প্রতারণা করে ঠকানো হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর সকালে আরো জমজামাট ছিলো যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা। দালালের মাধ্যমে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে স্টেচারে করে রোগী এনে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্ট, আল্ট্রাসনো ও এক্স-রে করানো হয়েছে। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগ থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ভাগিয়ে এনে ব্যবসা চালু রেখেছেন তারা।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কাছে তথ্য আছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ নিন্মমানের রি-এজেন্ট দিয়ে ও স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি থেকে পাশকৃত কোনো টেকনোলজিস্ট, টেকনেশিয়ান ছাড়ায় প্যাথলজিক্যাল বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্ট দিচ্ছে যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কম্পিউটারে আগে থেকে লিখে রাখা প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট রোগীদের সরবরাহ করা হচ্ছে। কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই পরিচালিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াই আল্ট্রাসনো করানো হচ্ছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে আন্ডার গ্রাউন্ডে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি মালিকপক্ষ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মানুষের সাথে এ প্রতারণা করছেন। শতকরা ৫০টাকা কমিশন দিয়ে দালালের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতাল ও জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগী ভাগিয়ে চালানো হচ্ছে গলাকাটা ব্যবসা।
বহুল বিতর্কিত যশোর ডায়াগস্টিক সেন্টারে ২০ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মীর আবু মাউদকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্যাথলজি বিভাগে তল্লাশি চালিয়ে নিন্মমানের মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রমাণ পান ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক। একই সাথে প্রমাণ মেলে স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি থেকে পাশকৃত কোনো টেকনোলজিস্ট, টেকনেশিয়ান ছাড়ায় প্যাথলজিক্যাল বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। এমনকি নেই স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া বৈধ কোনো লাইসেন্স। নোংরা ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে মানুষের সাথে অব্যাহত প্রতারণার সু-নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক গোলাম ছরোয়ারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান। একই সাথে নির্দেশ দেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার।
ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বৈধ কাগজপত্র করার জন্যে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়েছে। একই সাথে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এগুলো করতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে।
এর আগে গত ২৬ জুন যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালান ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান। ওই অভিযানে প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু সংশোধন করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ডায়াগন্টিক সেন্টারটির মালিকপক্ষ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রায় চার মাসেও শুধরায়নি। বরং দালাল নির্ভর প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা অব্যাহত রেখেছেন। তারই প্রেক্ষিতে ২০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বারের মতো ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে এক লাখ জরিমানা করাসহ প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।