পদত্যাগের ঘোষণা বরিশালের মেয়র কামালের

kamal

অদৃশ্য চাপের কথা বললেও পদত্যাগের ঘোাষণা দিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল। সোমবার দুপুরে তিনি নিজ বাসভাবনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ সময় অদৃশ্য চাপের কথা বললেও গত এক মাস ধরে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চরম অসহযোগিতা এবং রাজনৈতিকভাবে প্রচন্ড চাপের মুখে ছিলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার নির্বাহী কর্মকর্তা তার আদেশ মানতে প্রকাশ্যে অসম্মতি জানান। একারণেই নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ২২ দিন আগেই তিনি এ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। আগামী ২৩ অক্টোবর মেয়র কামাল পরিষদের পাঁচবছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কথা।

মেয়রের আকস্মিক সংবাদ সম্মেল ডাক পেয়ে কালু শাহ সড়কে তার বাসভবনে দুপুরে ছুটে যান সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অদৃশ্য চাপের কারণে আগামী ৪ অক্টোবর আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্ধারিত মেয়াদের আগে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ায় নগরবাসীর কাছে আমি ক্ষমা চাই।

মেয়র কামাল জানান, তার মেয়াদ শেষ হতে এখনও ২২ দিন বাকি। তবে তাকে নগর ভবনের কোনো কাজই পরিচালনা করতে দেয়া হচ্ছে না। নগর ভবনের তহবিলে প্রায় ৬০ কোটি টাকা জমা থাকার পরও অদৃশ্য এক শক্তি নগর উন্নয়ন, রাস্তাঘাট মেরামত, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, সড়ক বাতি কেনা, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, স্টেশনারি মালামাল কেনা, নগরবাসীর সেবাসহ দাফতরিক কাজকর্ম করতে বাধা দেয়া হচ্ছে।

আহসান হাবিব কামাল বলেন, ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে তিনি জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। গত কয়েক বছর ধরে শতপ্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নগর ভবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম করে আসছিলেন। কিন্তু গত জুন মাস থেকে অদৃশ্য শক্তির কারণে তার আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি নগর ভবন এবং নগরবাসীর জন্য কোনো সেবামূলক কাজ করতে পারছেন না। তাই এই পদ আকড়ে থাকা অর্থহীন। এ কারণে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার তিনি তার মেয়াদের সব শেষ অফিস করবেন। আগামী ৪ অক্টোবর নিয়মানুযায়ী তিনি সংশ্লিষ্টি কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।

ওই অদৃশ্য শক্তির পরিচয় জানতে চাইলে মেয়র কামাল বলেন, এটা বরিশালের সবাই জানেন। বিরোধীদলের একজন লোক হয়ে হয়রানির আশঙ্কায় ওই শক্তির নাম বলতে চাই না। ওই অদৃশ্য শক্তি সাংবাদিকদের খুঁজে বের করার অনুুরোধ জানান তিনি। ২০১৩ সালের ১৫ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনকে (প্রয়াত) হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবিব কামাল। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। সে হিসাবে আগামী ২৩ অক্টোবর মেয়র হিসেবে তার পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা। কিন্তু চাপের মুখে স্বাভাবিক কাজ করতে না পেরে নির্ধারিত মেয়াদের ২২ দিন আগে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মেয়র কামাল।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার নগর ভবনে মেয়র কামাল বেশ কয়টি ফাইল অনুমোদনের জন্য স্বাক্ষর করতে গেলে দেখেন সেখানে প্রধান নির্বাহীর স্বাক্ষর নেই। তিনি প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা ইসমাইল হোসেনকে ফাইলে স্বাক্ষর করতে বললে তিনি তা করতে প্রকাশ্যে অসম্মতি জানান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এর পরপরই মেয়র কামাল পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মানব জমিনকে বলেন, অদৃশ্য এক শক্তির চাপে ঢাকা থেকে কোন অর্থ ছাড় হচ্ছে না। ফলে নগরবাসী সকল সেবা এখন প্রায় বন্ধের মুখে। বকেয়া রয়েছে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল। কর্মচারীদের বেতনও বকেয়া পড়েছে। একাউন্টে অর্থ থাকার পরও প্রধান নির্বাহী কোন ফাইলে স্বাক্ষর করছেন না। তার মেয়াদ আছে মাত্র ২২দিন। অথচ এখনই তাকে প্রায় অবরুদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মেয়র পদে থাকা আর না থাকা সমান কথা।