ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করার কোনো আইন নয়। কেউ যদি এসব অপরাধ না করে তাহলে নিশ্চয়ই এই আইনের আওতায় আসবে না।

বৃহস্পতিবার দিনাজপুর জেলার নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পাস করার পর সেটাকে বলা হচ্ছে- স্বাধীন সাংবাদিকতা ও বাকস্বাধীনতা ব্যাহত হবে, এটি নিরর্থক। অপরাধীদেরকে একটি আইনের আওতায় আনতে হবে, তাদের যদি আইনের আওতায় আনা না হয়, তাহলে তারা এমন কাজ করছে-যেটা ব্যক্তি, সমাজ, দেশ-সবই নষ্ট হচ্ছে। সেটার জন্য এই আইন করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের জন্য আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনটি সংশোধনী আনার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, এডিটরস কাউন্সিল এ বিষয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করার পর আমি বলেছি, যে কয়টি ধারা সম্পর্কে তারা দাবি তুলেছে-সেই কয়েকটি ধারা নিয়ে আমি মন্ত্রিপরিষদে আলোচনা করব। মন্ত্রিপরিষদ আমাকে যে দিকনির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী আমি এডিটরস কাউন্সিলের সঙ্গে আবার আলোচনা করব।

সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্রনাথ সিনহার মামলার ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে-তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এর আগে দিনাজপুর জেলার নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেন, বিচারিক কাজে নতুন রিক্রুটের মাধ্যমে বিচারক স্বল্পতা নিরসন করা হবে। আর মামলার জট কমাতে কোনো অতিরিক্ত জেলা জজকে এক বছরেই জেলা জজে পদোন্নতি দেয়া হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পরই একটি সংবিধান দিয়েছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার জেনারেল জিয়া এবং এরশাদ সেই সংবিধানকে লাথি মেরে দেশে বিচারব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। ২১ বছরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পর অনেকে বিচার পেয়েছে। বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জনগণের ভোট দেয়ার মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশে শুধু নারী নেতৃত্ব নয়, জনগণের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেশের জনগণ নিরাপদে রয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে নিজেদের বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখতে এবং দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

দিনাজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভুঞার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান লিটা, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ড. আবু নঈম মো. আবদুছ ছবুর, পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম, দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নুরুজ্জামান জাহানী, সাধারণ সম্পাদক মো. তহিদুল হক সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এর আগে মন্ত্রী দিনাজপুর জেলার নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধন করেন এবং শেষে দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সকালে আইনমন্ত্রী দিনাজপুরে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করেন।