ইন্ডিয়ান আইডলের জুরি প্যানেলে থেকে সরিয়ে দেয়া হলো অনু মালিককে

যৌন হয়রানির অভিযোগে ইন্ডিয়ান আইডলের জুরি প্যানেল থেকে অনু মালিককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। হ্যাশট্যাগ-মিটু বিতর্কের জেরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রিয়েলিটি শো কর্তৃপক্ষ। ফলে জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানের বিচারকের আসনে আর দেখা যাবে না তাকে।

বলিউডের জনপ্রিয় এই সঙ্গীত পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন উড়িষ্যার সঙ্গীতশিল্পী সোনা মহাপাত্র ও যশরাজের নাতনি শ্বেতা পন্ডিত। এ ছাড়া গত শনিবার একই অভিযোগ করেন দুই উঠতি গায়িকা। অডিশনের জন্য ডেকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগও ওঠে। এরপরই রিয়েলটি শো থেকে অনু মালিককে সরিয়ে দিল সনি টেলিভিশন।

এ বিষয়ে চ্যানেলটির পক্ষ থেকে একটি অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়, ইন্ডিয়ান আইডলের সঙ্গে আর কোনো রকম সম্পর্ক নেই অনু মালিকের।

তবে অনু মালিকের দাবি, কাজে মনোযোগ দিতে না পারায় তিনি ইন্ডিয়ান আইডলের জুরি প্যানেল থেকে সরে যাওয়ার কথা জানান, এতে কর্তৃপক্ষও সায় দেয়।

প্রথম সিজন থেকেই ইন্ডিয়ান আইডলের বিচারক হিসেবে ছিলেন অনু মালিক। তার বিরুদ্ধে যৌন অভিযোগের প্রথম ঘটনাটি ৯ এর দশকের। মেহবুব স্টুডিয়তে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারীর দাবি, স্টুডিয়োর মধ্যে তাকে একা পেয়ে চেপে ধরেছিলেন আনু মালিক। কিছুক্ষণ পর অবশ্য তিনি নিজেই ক্ষমা চেয়ে নেন ওই নারীর কাছে। যদিও ঘটনা এখানেই শেষ নয়।

পরে একটি সংস্থার জন্য চাঁদা আনতে গেলে ফের তাকে হেনস্তা করেন আনু মালিক। ওই নারী লিখেছেন, ‘আমি আনু মালিকের বাড়িতে গিয়ে কুৎসিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। একটি সোফাতে আমার খুব কাছে এসে বসেছিলেন তিনি। ওর পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই, এটা জানার পরই বুঝতে পারি আমি ফাঁদে পড়ে গেছি। উনি আমাকে জোর করে চেপে ধরে আমার স্কার্ট টেনে নামিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর নিজের প্যান্টের চেন খুলে আমাকে চেপে ধরেছিলেন আনু মালিক। সৌভাগ্যবশত, সেই সময়ই দরজায় বেল বেজে ওঠে। আমি বেঁচে যাই।’

যদিও এ ঘটনার কথা কাউকে জানানো যাবে না, তাকে এ হুমকি দেন আনু মালিক। এরপর তাকে নিজের গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাবও দেন।

নারীর অভিযোগ, ‘রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ একটা ফাঁকা মাঠের মধ্যে গাড়ি দাঁড় করান আনু মালিক। এরপর ফের তিনি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। হঠাৎ করেই নিজের প্যান্টের চেন খুলে আমার চুল ধরে নিজের কোলে টেনে নেন। বেশ কিছু ক্ষণ ধস্তাধস্তির পর স্থানীয় এক নিরাপত্তারক্ষী গাড়ির দিকে এগিয়ে আসেন। আমি তখন কোনো রকম দরজা খুলে দৌড়ে পালাই।’

অন্য এক নারীও যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন আনুর বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ, আনু মালিক তাকে একটি শিপন শাড়ি পড়ে স্টুডিয়োতে আসতে বলেছিলেন। স্টুডিয়োতে আসার পর আনু তাকে বলেন, ‘আপনার কোনও বয়ফ্রেন্ড নেই, আপনি খুব একা?’ এর পরই স্টুডিয়োর ফ্লোরে তাকে ঠেসে ধরেন। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন ওই নারী, কারণ পুরো স্টুডিয়োই ছিল সাউন্ডপ্রুফ। চিৎকার করলেও বাইরে থেকে কেউ শুনে যে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন সেই উপায়ও ছিল না। তার আপত্তির পর অবশ্য নিজেকে সামলে নেন আনু মালিক। গম্ভীর গলায় বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে খুব খুশি।’

শুধু এ দুই নারীই নন, এর আগেও হ্যাশট্যাগ-মিটু আন্দোলনে একের পর এক যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে আনু মালিকের বিরুদ্ধে। সোনা মহাপাত্রের অভিযোগ ছিল, ‘অনু মালিক আসলে একজন ধারাবাহিক শিকারি।’

পণ্ডিত যশরাজের নাতনি শ্বেতার অভিযোগ, তার যখন ১৫ বছর বয়স, তখন মুম্বাইয়ের একটি স্টুডিয়োতে আনু মালিক তাকে যৌন হেনস্তা করেছিলেন। আনু শিশুদের ওপর যৌন অত্যাচারে আসক্ত, একথা জানিয়ে টুইটারে নিজের হ্যাশট্যাগ-মিটু শেয়ার করেছেন সঙ্গীত শিল্পী শ্বেতা। সাবধান করেছিলেন তরুণ গায়িকাদেরও।