যশোরে ছাত্রদল নেতা পলাশ হত্যা মামলার রায় ৩০ অক্টোবর

যশোরে চাঞ্চল্যকর জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কবির হোসেন পলাশ হত্যা মামলার রায় আগামী মঙ্গলবার (৩০অক্টোবর) ঘোষণা করা হবে। বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ রব হাওলাদার এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন।

খুলনার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আগামী ৩০ অক্টোম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। ওইদিন এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী ফকির মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের মামলাটিতে ৪৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৯ জনের সাক্ষ্য দিয়েছি। বৃস্পতিবার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন।’

মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- শহরের ষষ্টিতলাপাড়ার মৃত শফি মিয়ার ছেলে তরিকুল ইসলাম, চাঁচড়া রায়পাড়ার মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে প্রিন্স ওরফে বিহরী প্রিন্স, পূর্ব বারান্দিপাড়া কবরস্থান রোডের আব্দুল করিম ফকিরের ছেলে রাজ্জাক ফকির, গাড়িখানা রোডের মসলেম উদ্দিন ড্রাইভারের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা মানিক, ঘোপ বৌ-বাজার এলাকার মজিবর শেখের ছেলে রবিউল শেখ, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের গাজী জাহিদুর রহমানের ছেলে সজল, সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে টুটুল গাজী, বেজপাড়ার টিবি ক্লিনিক এলাকার ফিরোজ আলীর ছেলে ফয়সাল গাজী, রেলগেট পশ্চিমপাড়ার বিল্লাল খানের ছেলে শহিদুল ইসলাম খান ওরফে সাইদুল, বাঘারপাড়া উপজেলার বহরমপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে শহরের ষষ্টিতলাপাড়ার ভাড়াটিয়া শহিদুল ইসলাম ও যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আশা এন্টারপ্রাইজের মালিকের ছেলে আল মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ।

এরমধ্যে পলাতক আছেন, শহিদুল ইসলাম খান ওরফে সাইদুল, শহিদুল ইসলাম, প্রিন্স ওরফে বিহরী প্রিন্স, জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা মানিক, রবিউল শেখ।

আদালতে উপস্থিত ছিলেন, আল মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ, রাজ্জাক ফকির, টুটুল গাজী, সজল, রাজ্জাক ফকির, ফয়সাল গাজী ও তরিকুল ইসলাম। যুক্তিতর্ক শেষে উপস্থিত আসামিদের জামিন বাতিল করে সি/ডব্লিউ মূলে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে যশোর শহরের ঈদগাহ মোড়ে চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে বসে ছিলেন কবির হোসেন পলাশ। এসময় দুটি মোটরসাইকেলযোগে সন্ত্রাসীরা এসে পলাশকে গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের বোন ফারহানা ইয়াসমিন ১৩ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এআই আবুল খায়ের মোল্লা ২০১৪ গত ৯ এপ্রিল ১০জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। তবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসা হত্যার পরিকল্পনাকারী ব্যবসয়ী মাসুদ ও সন্দেহভাজন হিসেবে আটক শফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

হত্যা পরিকল্পনাকারীকে অব্যাহতির সুপারিশ করায় মামলার বাদী ফারহানা ইয়াসমিন রুমা দাখিলকৃত দুটি চার্জশিটের বিরুদ্ধে ১৩ জুলাই আদালতে নারাজী পিটিশন দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে বিচারক মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরকে নির্দেশ দেন।

তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই যশোরের ওসি একেএম ফারুক হোসেন হত্যা পরিকল্পনাকারী মাসুদসহ ১১জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরণের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পান। এরপর তিনি এ চার্জশিট দাখিল করেন। একইসাথে তদন্তকালে আটক শফিকুল ইসলাম শফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

যে কারণে হত্যা:
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, যশোর বিভাগীয় কাস্টমসে ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট অপচনশীল পণ্যের ৮টি লটের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ওই নিলামে কবির হোসেন পলাশ ও তার ব্যবসায়ীক পার্টনার এনামুল হকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নেয়। নিলামে ৮ লটের অপচনশীল মালামালের মধ্যে পলাশ এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর ভিকটিম পলাশ ৩টি লট এবং তার পার্টনার এনামুল হক ২টি লট মোট ৫টি লটের মালামাল নিলামে পায়। অপর দিকে, পলাশের প্রতিপক্ষ আশা এন্টারপ্রাইজের মালিকের ছেলে আল মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ এর ব্যবসায়ীক পার্টনার কামরুজ্জামান চঞ্চল একটি লটের নিলাম পায়। এছাড়া মেসার্স এএম ট্রেডার্স যশোর ও ইসলাম ট্রেডার্স যশোর নামক দুইটি প্রতিষ্ঠান দুইটি লটের মালামাল নিলাম ক্রয় করে। এতে পলাশের প্রতিপক্ষ মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ ক্ষুদ্ধ হয়। ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১০টার সময় কবির হোসেন পলাশ তার ব্যবসায়ীক পার্টনাররা এক সাথে পিকআপ ভাড়া করে তাদের নিলামে পাওয়া লটের মালামাল ডেলিভারী নেওয়ার জন্য যশোর চাঁচড়া ডালমিল সংলগ্ন শুল্ক গোডাউনে এসে গোডাউন অফিসার সম্ভু নাথদের কাছ থেকে মালামাল বুঝে নেওয়ার জন্য কাস্টমস গোডাউনে শ্রমিকের মাধ্যমে মালামাল পৃথক করতে থাকে। লটের মালামাল ডেলিভারী দেয়ার সময় বেলা সাড়ে ১১ টায় পলাশের অপর ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ আশা এন্টারপ্রাইজ এর মালিকের ছেলে মো. আল মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ দুইটি মোটর সাইকেলে করে সন্ত্রাসী, প্রিন্স ওরফে বিহারী প্রিন্স, তরিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা মানিক, শহিদুল ইসলাম খান ওরফে সাইদুল কাষ্টমস গোডাউন চত্বরে প্রবেশ করে গোডাউন অফিসার শম্ভু নাথকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও হুমকি দেয় এবং তাদের নিলামে পাওয়া লটের মালামাল পলাশকে কেন দেওয়া হচ্ছে এই বলে চিৎকার করতে থাকে। সে সময় ভিকটিম পলাশের মালামাল ডেলিভারি নিতে মাসুদ ও তার সহযোগীরা বাঁধা সৃষ্টি করে। পলাশকে উদ্দেশ্য করে বেশি টাকার গরম হয়েছে বলে প্রাণ নাশের মাসুদ হুমকি দেয়।

চার্জশিটে আরো উল্লেখ্য করা হয়, মাসুদ ও তার সহযোগীরা সর্বদা প্রভাব খাটিয়ে কাস্টমস এর নিলাম সামগ্রী একচেটিয়া ভাবে ক্রয় করতো। ভিকটিম পলাশ প্রকাশ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া তাদের ব্যবসায় বাঁধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে আসামিদের সাথে পলাশের শুল্ক বিভাগের ট্রেন্ডার ও নিলাম ক্রয়/বিক্রয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে পলাশকে হত্যার পরিকল্পনা করে বলে গোপন তদন্তে জানা যায়।

ওই বছরই ১০ ডিসেম্বর কাস্টমস গোডাউনে আরো একটি বড় ধরণের নিলামের দিন ধার্য ছিল। পলাশ যাতে ওই নিলামে অংশ নিতে না পারে সেজন্য তার আগের দিন ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পলাশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।