যাকে নৌকা মার্কা দিয়ে পাঠানো হবে, তার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার বিকেলে বরগুনার তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ চিরদিন অন্ধকারে ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় তাদের উন্নয়ন হয়েছে। সুদিন-দুর্দিনে বরগুনার মানুষ নৌকার পক্ষে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। নৌকায় ভোট দিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং স্বাধীনতা পেয়েছি। জীবন মান উন্নয়ন হয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে কেউ কখনো ব্যর্থ হয়নি। আরেকবার নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার সুযোগ দিন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদককে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। সরকারের পাশাপাশি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের আরো সচেতন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। ১৫ আগস্ট আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমার মা, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল এমনকি আমার ছোট ভাই ১০ বছরের শিশু রাসেলকেও ঘাতকরা হত্যা করেছে। সেদিন আমি এবং আমার বোন শেখ রেহেনা বিদেশে থাকায় বেঁচে গেছি। এরপর ২১ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি। মারতে পারেনি। সেদিন আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে সরকার প্রধান বলেন, ‘দলটি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশকে ধংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দেশ বানিয়েছে। পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মানুষের উন্নয়নে বিশ্বাস করে না। এতিমের টাকা চুরির দায়ে মামলা হয়েছে। সে মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া জেলে গিয়ে শাস্তি ভোগ করছেন। তার ছেলে তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলা মামলায় সাঁজাপ্রাপ্ত। কিন্তু, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, মানুষের জীবন মান উন্নয়ন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। এদেশ কখনো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের দেশ হবে না। যুব ও ছাত্র সমাজ যাতে সন্ত্রাসী ও মাদকে জড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, এখানে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। কতিপয় লোকের জন্য ইসলামকে জঙ্গিবাদের ধর্ম বলা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘তালতলীর মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প ও জাহাজ রিসাইকেলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এতে সকলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রদের কোনো স্বীকৃতি ছিল না। আমরা ৫টি বোর্ড করে কওমি মাদ্রাসা ছাত্রদের সনদের ব্যবস্থা করেছি। কওমি মাদ্রাসায় যারা লেখাপড়া করে তারাও আমাদের সন্তান। সনদ পেয়ে যাতে তারা চাকরি পায়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রেজবি-উল কবির জমাদ্দারের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুচ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাবেক ছাত্র নেতা শাহে আলম, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন, ফজলুল হক জমাদ্দার প্রমুখ।
সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র বদলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এই অঞ্চলের মানুষ ভাগ্যবান। পায়রা বন্দর হবে দক্ষিণাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।’
তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহবান জানান।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘তালতলীতে জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পায়নের কার্যক্রম চলছে। এ অঞ্চলে রাস্তা-ঘাট, পর্যটন, কালভার্টসহ শিল্পাঅঞ্চলে পরিণত করা হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ দক্ষিণাঞলের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহবান জানান।