লগি-বৈঠা দিয়ে খুনের বিচার একদিন হবেই: রিজভী

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার একদিন হবেই বলে তিনি ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

রবিবার (২৮ অক্টোবর) দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ এই মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘২০০৬ সালের এই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী রাজনৈতিক সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে লগি-বৈঠা দিয়ে পাশবিক প্রহার, গুলি আর ইট-পাটকেলের আঘাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করা হয়।’

‘এই আদিম অমানবিক উল্লাস দেখে দেশবাসীসহ সারা বিশ্বাস আতঙ্ক ও বেদনায় শিহরিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে আওয়ামী সরকারের সৃষ্ট অবিরাম রক্তপাতের ফলে দেশজুড়ে নিস্তব্ধতার আচ্ছাদন তৈরি করার চেষ্টা হলেও ২৮ অক্টোবরের সেই মৃত্যু-বিভীষিকা জনগণ এখনও ভুলে যায়নি। তারা সরকারেই থাকুক আর বিরোধী দলেই থাকুক, সহিংস সন্ত্রাসই যে আওয়ামী লীগের আদর্শ ও নীতি প্রতিমুহূর্তে সেটির প্রতিফলন ঘটে। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসের ছোবলে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হয়েছে। এগুলো চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ, এজন্য আওয়ামী লীগকে বিচারের সম্মুখীন হতেই হবে।’

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কতিপয় আত্মবিক্রয় করা লোকজনের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এরা সমস্ত শক্তি দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার চিরদিনের জন্য হরণ করে নিতে শেখ হাসিনার মনোবাঞ্চা পূরণে নিরন্তর কাজ করছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার খুলনায় বললেন, সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার হবে, আবার ইসি সচিব চট্টগ্রামে বললেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ৮৪ হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনবে নির্বাচন কমিশন। এগুলো নাকি শহর এলাকায় ব্যবহার করা হবে।’

‘সিইসি ও ইসি সচিব দুজনই আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সদা তৎপর। এদিকে রংপুরে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বললেন, ইভিএম ব্যবহার করা হবে কী না, তা এখনও অনিশ্চিত। একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করার জন্য ভোটারদের গোলক ধাঁধার মধ্যে ফেলতে কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা এসমস্ত বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলছেন।’

রিজভী বলেন, ‘আসলে ইভিএমের নামে মহা জালিয়াতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনদের কিছু লোকের পকেট ভারী করার জন্য সারা দুনিয়ায় ধিকৃত ও বিতর্কিত ইভিএম মেশিন ৩৮২৫ কোটি টাকায় কেনা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় কমিশনার ভোটারবিহীন সরকারের একনিষ্ঠ সেবক বলেই এদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার নিয়ে বিরোধিতা সত্ত্বেও সেই ইভিএম পদ্ধতি নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। সীমিত আকারের কথা বলা হলেও আরপিও সংশোধন করে তারা ব্যাপকভাবেই আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকারের প্রধান একতরফা নির্বাচন করতে সব অস্ত্র ব্যবহার করছেন, যাতে তার ক্ষমতায় থাকাটা নিষ্কন্টক হয়। এই কারণে তার আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন দিয়ে জালিয়াতির বাক্স ইভিএম চালু করতে চাচ্ছেন।’

রিজভী বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে সবার চোখের সামনে পুলিশের সহায়তায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের ভোট ডাকাতি দেখার পরেও শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইভিএম পদ্ধতি চালু করবেন, এটি শিশু ও পাগল কেউই বিশ্ববাস করবে না। শুধু নৌকার পক্ষে ডিজিটাল ভোট-ডাকাতি করতেই এই ইভিএম ব্যবহারের তোড়জোড়।’

‘সবার মত অগ্রাহ্য করে নির্বাচন কমিশন একতরফাভাবে ইভিএম চালু ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার শামিল। আমি দলের পক্ষ থেকে ইভিএম পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের ভোট ধ্বংসের ষড়যন্ত্রজাল ছেঁড়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা রহমান, উপদেষ্টা আজম খান, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তফা, সহদপ্তর মনির হোসেন প্রমুখ।