যশোরে ছাত্রদল নেতা পলাশ হত্যা মামলার রায় মঙ্গলবার

চাঞ্চল্যকর যশোরে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কবির হোসেন পলাশ হত্যা মামলার রায় মঙ্গলবার (২৯ অক্টবর) ঘোষণা করা হবে। গত ২৫ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ রব হাওলাদার এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন।

এর আগে ২৩ ও ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। ২৫ অক্টোবর ছিল উভয়পক্ষের যুক্তিতর্কের সমর্থনে আইন দাখিলের দিন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক রায়ের দিন ধার্য করেন।

গত ৪ আগস্ট মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরে মামলায় জব্দ তালিকা, সুরতহাল রিপোর্ট, চিকিৎসক, দুই আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি গ্রহণকারী দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৯ জনের আদালতে সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খুলনার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট এনামুল হক জানান, মামলায় বাদীসহ আদালতে ৪৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৯ জনের সাক্ষ্য দিয়েছি। ২৯ জন সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রার্থনা করেছেন তিনি।

মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- শহরের ষষ্টিতলাপাড়ার মৃত শফি মিয়ার ছেলে তরিকুল ইসলাম, চাঁচড়া রায়পাড়ার মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে প্রিন্স ওরফে বিহরী প্রিন্স, পূর্ব বারান্দিপাড়া কবরস্থান রোডের আব্দুল করিম ফকিরের ছেলে রাজ্জাক ফকির, গাড়িখানা রোডের মসলেম উদ্দিন ড্রাইভারের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা মানিক, ঘোপ বৌ-বাজার এলাকার মজিবর শেখের ছেলে রবিউল শেখ, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের গাজী জাহিদুর রহমানের ছেলে সজল, সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে টুটুল গাজী, বেজপাড়ার টিবি ক্লিনিক এলাকার ফিরোজ আলীর ছেলে ফয়সাল গাজী, রেলগেট পশ্চিমপাড়ার বিল্লাল খানের ছেলে শহিদুল ইসলাম খান ওরফে সাইদুল, বাঘারপাড়া উপজেলার বহরমপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে শহরের ষষ্টিতলাপাড়ার ভাড়াটিয়া শহিদুল ইসলাম ও যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আশা এন্টারপ্রাইজের মালিকের ছেলে আল মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ।

এরমধ্যে পলাতক আছেন, শহিদুল ইসলাম খান ওরফে সাইদুল, শহিদুল ইসলাম, প্রিন্স ওরফে বিহরী প্রিন্স, জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা মানিক, রবিউল শেখ।

আর জেল হাজতে আছেন, আল মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ, টুটুল গাজী,সজল, রাজ্জাক ফকির, ফয়সাল গাজী ও তরিকুল ইসলাম।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে শহরের ঈদগাহ মোড়ে চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে বসে ছিলেন কবির হোসেন পলাশ। এসময় দুটি মোটরসাইকেলযোগে সন্ত্রাসীরা এসে পলাশকে গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের বোন ফারহানা ইয়াসমিন ১৩ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এআই আবুল খায়ের মোল্লা ২০১৪ গত ৯ এপ্রিল ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। তবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসা হত্যার পরিকল্পনাকারী ব্যবসয়ী মাসুদ ও সন্দেহভাজন হিসেবে আটক শফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

হত্যা পরিকল্পনাকারীকে অব্যাহতির সুপারিশ করায় মামলার বাদী ফারহানা ইয়াসমিন রুমা দাখিলকৃত দুটি চার্জশিটের বিরুদ্ধে ১৩ জুলাই আদালতে নারাজী পিটিশন দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে বিচারক মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরকে নির্দেশ দেন।

তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই যশোরের ওসি একেএম ফারুক হোসেন হত্যা পরিকল্পনাকারী মাসুদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরণের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পান। এরপর তিনি এ চার্জশিট দাখিল করেন। একইসাথে তদন্তকালে আটক শফিকুল ইসলাম শফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।