মনোনয়ন চূড়ান্তের পরে মাঠের ক্ষোভ নিয়ে টেনশনে আওয়ামী লীগ

a.lig-logo

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন চূড়ান্তের পরে নির্বাচনী মাঠের তৃণমূলের ক্ষোভ নিয়ে টেনশনে আছে। এবার ৭টি আসন ছাড়া প্রতিটি আসন থেকে একাধিক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। দলের সিন্ধান্ত মেনে নিয়ে বিদ্রোহ না করলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রার্থীর পক্ষে বিরোধিতা করা নিয়ে টেনশনে রয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। খবর মানবকণ্ঠ।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দেশের সব রাজনৈতিক দল। ক্ষমতাসীন দল গত বছর থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলেও বিএনপি নির্বাচন না করার কথা বলে আসছিল বারবার। তবে আর কোনো উপায় না পেয়েই শেষমেশ ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়াকে রাজনৈতিতে শুভ সূচনা মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে দেশের মধ্যে যে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলেন তা তাদের জন্য মঙ্গল ছিল না, এটা বুঝতে পেরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত খুবই ভালো দিক। তবে এবার ক্ষমতাসীনদের মধ্যে কিছুটা চিন্তার ব্যাপার রয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সামাল দিতে বেগ পোহাতে হতে পারে একাধারে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিক্রির পরই প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করা নিয়ে টেনশনের মধ্যে দিন কাটছে দলের হাইকমান্ডের। দলের থেকে কঠোর নির্দেশ থাকলেও বিদ্রোহ ঠেকাতে হিমশিম খেতে হতে পারে এ দলটিকে। এবার মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে কে বড় নেতা কে ছোট নেতা এই বিষয়টি গুরুত্ব পাবে না। বিভিন্ন জরিপে যারা এগিয়ে আছেন, তাদেরই নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে। যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দল থেকে এমনটাই নির্দেশনা রয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ওপর। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে আর মাত্র ১/২ দিন বাকি থাকলেও তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয়দের দূরত্ব রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এই দূরত্ব নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলেও জানান একাধিক তৃণমূল নেতা। এখনো মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে একের অপরের বিরোধী ভাব রয়েছে।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন খুব কঠিন নির্বাচন হবে। খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জরিপ চালিয়েছি। কোন প্রার্থীর প্রতি ভোটারের সমর্থন আছে, সেটা বিবেচনায় নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমি যাকেই মনোনয়ন দেব, তাকেই মেনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রার্থীর বিরোধিতা কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। আওয়ামী লীগের দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হবে। এ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল না। উপস্থিত একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। এসব তথ্য পাওয়া নিশ্চিত করেন।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ক্ষমতায় আসছি মনে করে নিজেদের মধ্যে যে আসন খাওয়া-খাওয়ির মনোভাব, তা পরিহার করতে হবে। গত দুই নির্বাচনে এনেছি, এবারো আমিই ক্ষমতায় আনব, এটা মনে করে কোনো লাভ নেই। প্রার্থীর নিজ নিজ যোগ্যতা, দক্ষতা, রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকতে হবে। অবশ্যই তাকে জনসম্পৃক্ত হতে হবে। আমি সবার সম্পর্কে জানি। আপনাদের সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কারা কী করেছেন, কারা কোন দল থেকে এসেছেন বেশি লাফালাফি করার দরকার নেই। কোনো গ্রুপিং করারও দরকার নেই। কিছু কিছু আসনে অস্বাভাবিক হারে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে ওই এলাকায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। সেখানে নেতৃত্ব শূন্যতা রয়েছে, সেখানে যত বড় নেতাই হোক না কেন, তারা পার্টিকে অর্গানাইজড করতে পারেননি। এটা তাদের নেতৃত্বশূন্যতার প্রমাণ। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অপর দিকে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো টেনশনে নেই। প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে নিয়েই কাজ করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বাইরে গেলে দলকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হতে হবে।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ থাকতেই পারে। নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিয়ে কাজ করবেন। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল, এ দলে অনেক ত্যাগী নেতা আছেন। অনেকের চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে। আমাদের নেতাকর্মীদের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ করবেন এবং নৌকাকে বিজয়ী করবেন। আর যারা এ ধরনের (বিদ্রোহী বা বিরোধিতা) কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে সংগঠন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণভবনে সাক্ষাৎ করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের কথা বলেছেন। এবং প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা শুনেছেন। তাদের সব কথা শুনে দলের সভাপতি সমগ্র বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সাংগঠনিকভাবে একটি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। তিনি আমাদের বলে দিয়েছেন, আমাদের কী করতে হবে এবং কী করণীয় আছে।

আব্দুস সোবহান গোলাপ আরো বলেন, এ বছরের নির্বাচন আমাদের জন্য কঠিন নির্বাচন। যে কোনো মূল্যে হোক, নৌকাকে বিজয়ী করে নিয়ে আসতে হবে। কারণ, আমাদের যে ভিশন জাতির সামনে দিয়েছি, সেই ভিশন, মেগা প্লান এবং পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগকে যে কোনো মূল্যে জিততে হবে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে নিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের হাত তুলে ওয়াদা করিয়েছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও বলেছেন, ‘আপনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা তা মাথা পেতে নেব।’ কোনো প্রার্থীকে পছন্দ না হলেও চোখ বন্ধ করে নৌকা দেয়ার জন্য বলেছেন। উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে আমাদের আবার ক্ষমতায় আসবে হবে। ১০, ১৫ এবং ২০টা মনোনয়ন নিতেই পারে, নেতাদের সংখ্যা বাড়তেই পারে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপর নির্ভর করে- নৌকা আবার ক্ষমতা আসবে কিনা। তৃণমূলের ক্ষোভ এখন সমাধান হয়ে গেছে। যদি পাল্টাপাল্টি প্রার্থী হয় তাহলে সে আজীবনের জন্য বিদ্রোহী থাকবে। আজীবনের জন্য সে বহিষ্কার হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।