যশোর-৬ কেশবপুর আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নিহত ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর আবুর লাশ শুক্রবার দুপুরে কেশবপুরে তার নিজগ্রাম বাগদহে পৌঁছায়। গত ১৮ নভেম্বর রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে নিখোঁজের ৪ দিন পর তার লাশ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে পাওয়ার খবর শোনার পর হাজারো মানুষ নিহতের বাড়িতে হাজির হয়। সারা রাত জেগে বাগদাহ গ্রামসহ মজিদপুর ইউনিয়নের মানুষ আবু বকর আবুর লাশের জন্য অপেক্ষা করেন।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার সময় নিহতের লাশ কেশবপুরে পৌঁছানোর পর তার রাজনৈতিক সহকর্মীসহ দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ আবু বকর আবুর লাশ দেখার জন্য ভিড় করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার পর প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদে। এরপর নিজ বাড়িতে নেওয়ার পর তার আত্মীয় স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বিকেলে কেশবপুর পাবলিত ময়দানে মরহুমের নামাজে জানাজায় অংশ নেন কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানূর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠণিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হোসেন আজাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা, পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলাউদ্দিন. অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম পিটু, সাংগঠনিক সম্পাক কাউন্সিলর বিপুল সিদ্দিকী সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার প্রতিনিধিবৃন্দ।
জানাজার নামাজের ইমামতি করেন কেশবপুর টাইটেল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল জলিল। মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্থানয়ি এমপি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের পক্ষে জেলা পরিষদ সদস্য হাসান সাদেকসহ আওয়ামীলীগ নের্র্তৃবৃন্দ।
গত ১৮ নভেম্বর রাত ৮টার পর রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার ৪ দিনপর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বুড়ি গঙ্গা নদী থেকে ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ১২ নভেম্বর ঢাকা যান। সেখানে পল্টন এলাকার মেট্রপলিটন হোটেলের ৪১৩ নম্বর কক্ষে তিনি অবস্থান নেন। তিনি ১৯ নভেম্বর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য সেখানে অবস্থান করতে থাকেন। ঘটনার দিনর রাত ৮টার দিকে তার সঙ্গী ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম রুমে ফিরে এসে তাকে রুমে না পেয়ে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তার ব্যবহৃত সেল ফোন থেকে তার কেশবপুরস্থ ভাগ্নের সেলে ফোনে কয়েকটি মিসকল আসে। প্রত্যেকবার এ নম্বরটিতে ব্যাক দিলে হ্যালো হ্যালো ছাড়া কোন কথা হয়নি। এরপর এরপর ০৯৬৩৮৮৮৮২০২ নম্বর মোবাইল থেকে ওই ভাগ্নের কাছে ফোন দিয়ে তার মামার জন্য দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ জন্য ওই রাতে কয়েকটি বিকাশ নম্বরও সরবরাহ করেন তারা। কিন্তু রাত ১২টার পর বিক্যাশের ট্রানজিট বন্ধ থাকায় সোমবার সকালে অপহরণকারীরা ০১৭৪৮১১০৫৭৭ নম্বর মোবাইল থেকে পুনরায় যোগাযোগ করে। এরপর তাদের দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করা হয়। পরবর্তীতে সকাল ৯টার দিকে অপহরণকারীরা দেড় লাখ টাকার প্রাপ্তি স্বীকার করে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। বহু অনুরোধের পর অপহরণকারীরা ২০ হাজার টাকা বিকাশ করার জন্য ২টি নম্বর সরবরাহ করে বলেন, ওই টাকা পাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে আবু বকর আবুকে ওই হোটেলের সামনে ছেড়ে আসা হবে বলে আশস্থ করলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।