দণ্ডিত ব্যক্তি হাইকোর্ট থেকে দণ্ড বা সাজা স্থগিত করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের আজকের আদেশটি সংবিধান পরিপন্থী। বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) এই সংক্রান্ত এক মামলায় হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চর আদেশের পর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আদেশ বলেছিলেন, নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কেউ দণ্ড বা সাজা স্থগিতের আবেদন করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এরপর আজ হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ বললেন, দণ্ডিত ব্যক্তি সাজা বা দণ্ড স্থগিত করে নির্বাচন করতে পারবেন। তাহলে তো এটা আগের আরেকটি হাইকোর্ট বেঞ্চের বিপরীতধর্মী আদেশ হলো।’
যশোর ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার দণ্ড হাইকোর্টে স্থগিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে বিভাগে না যাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণে তার বাধা থাকবে কিনা, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল বিভাগ এ বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।’
নির্বাচনে অংশ নিতে দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা স্থগিত নিয়ে হাইকোর্টের দু’টি বেঞ্চের আদেশ পরস্পর সাংঘর্ষিক কিনা, জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘অবশ্যই। সে জন্যই আমরা আপিল বিভাগে যাবো।’
হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিতের বিষয়টি আপিলে পূর্ণ নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদেশের মাধ্যমে যেকোনও বিচারক তার মত প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু সবার ওপরে আমাদের সংবিধান। আমাদের বিচারকরা বিচার করেন সাংবিধানিক বিধি মেনে নিয়ে। আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট আছে কোনও ব্যক্তি ২ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে এবং তার নৈতিকস্খলন ঘটলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আর ইতোমধ্যে তিনি যদি মুক্তিও লাভ করেন, তবু তাকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। কাজেই এই আইনের পরিপন্থী যদি কোনও আদেশ হয়, তবে অবশ্যই আমরা বিষয়টি আপিল বিভাগের দৃষ্টিতে আনবো। কেননা, বিষয়টি সংবিধানে স্পষ্ট করাই আছে।’
প্রসঙ্গত, এরআগে বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) বিকালে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা কিংবা দণ্ড স্থগিত হলে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে পর্যবেক্ষণ দেন হাইকোর্ট। ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার দণ্ড স্থগিত করে বিচারপতি মোহাম্মদ রইচ উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
তবে, এরআগে গত ২৭ নভেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে বিচারিক আদালতে দায়ের হওয়া মামলার দণ্ড স্থগিত চেয়ে বিএনপির ৫ নেতার করা আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ মামলার পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিচারিক আদালতে কোনও ব্যক্তি ২ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। তার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে (হাইকোর্ট) দণ্ড স্থগিত করা হলেও বা আপিল চলাকালে কোনও ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত কিংবা বাতিল হলে ওই ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নিতে কোনও বাধা থাকবে না বলেও আদালত মন্তব্য করেন।