এদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনও স্থান নেই : নাবিল আহমেদ

সংসদ সদস্য ও যশোর-৩ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে লড়াই করেছিলেন। এদেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলেরই। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনও স্থান নেই।

তিনি ১৭ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে যশোর সদরের নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে পূজা উদযাপন পরিষদের মতবিনিময়সভায় প্রধানঅতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর প্রার্থী বা তাদের সমর্থকরা নানাভাবে বিজয় উল্লাস করেন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেই দেশের সংখ্যালঘুদের উপর যে নারকীয় তাণ্ডব চালায় তা আমরা ভুলিনি। ২০১৩ ও ‘১৫ সালে সারাদেশে আগুন ও পেট্রোল সন্ত্রাসের কথা জাতি ভুলবে না। আসলে এই চক্র এমনই যে, ক্ষমতায় থাকলেও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে, আবার ক্ষমতার বাইরে থাকলেও করে।

তিনি বলেন, আমার দুর্ভাগ্য, ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও সময়কালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হই। সেকারণে আপনাদের সঙ্গে নির্বাচনী কোনও সভা-সমাবেশ বা প্রচারণায় অংশ নিতে পারিনি। এবার ভোটের মাঠে নেমে বন্ধু অার শত্রু চিনতে পারছি।

তিনি পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী; অামাদেরও একই নীতি। সেকারণে ছোটখাট মনোমালিন্য ভুলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আরেকবার প্রধানমন্ত্রী বানাতে আমরা এই কয়টা দিন নিরলস কাজ করে যেতে হবে।

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, গত ১০ বছরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণে এই অল্প সময়ে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনিতে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছি। ভিজিএফ, মাতৃভাতা, স্কুল ফিডিং, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা প্রভৃতি কর্মকাণ্ড আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।
এই সময়ে যশোরে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, যশোর সদরে ৯৮ ভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়েছে। আগামী বছরের প্রথমদিকে শতভাগ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সংগঠনের জেলা ও উপজেলা কমিটি আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী অসীম কুণ্ডু। সভায় আরও বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সহোদর ড. কাজী আনিস আহমেদ।

কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। একাধারে এই মাসটি আমাদের কাছে খুশির আবার বিষাদের। কেননা ৯ মাস যুদ্ধ করে আমাদের বিজয় হয়েছিল। আবার এই যুদ্ধে আমাদের ৩০ লাখ মানুষকে জীবন, ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত দিতে হয়।

তিনি বলেন, আমরা এইদেশে পারস্পরিক ভালবাসা আর সম্মান নিয়েই থাকতে চাই। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই আমাদের স্বপ্ন। কিন্তু ৭১ এর পরাজিত শত্রুরা ফের জোট বেধেছে। তারা ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ-ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, পীড়ন বাড়ে।

তিনি বলেন, সামাজিক সূচকে মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, শিশু মৃত্যু হ্রাস, শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে আমরা ভারত ও পাকিস্তান থেকে এই সময়ে এগিয়ে রয়েছি। আর এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেই। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। আর তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন যদি আমরা নৌকাকে জেতাতে পারি।

সভায় অারও বক্তৃতা করেন সংগটনের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সুকুমার রায়, জেলা সেক্রেটারি যোগেশ দত্ত, তপন ঘোষ, শ্রীমতি নমিতা রায়, সদর উপজেলা সভাপতি দুলাল সমাদ্দার, শ্যামল পাল, বিষ্ণুপদ বিশ্বাস, মোহনলাল দাস, বিশ্বম্ভর ঘোষ, সন্তোষ দাস, প্রশান্ত কুণ্ডু, কার্তিক গোলদার, তপন কুমার রায়, নবকুমার ঘোষ লব, নারায়ণচন্দ্র সরকার, গৌতম কর্মকার, গুরুদাস বিশ্বাস, প্রভাষ বিশ্বাস প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, যশোর সদরে প্রায় ৭৫ হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটার রয়েছেন। তাদের সকলের ভোট কাজী নাবিল আহমেদকে দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেকে যেন আরও একটি করে ভোট সংগ্রহ করতে পারেন, সেলক্ষ্যে তারা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করবেন।

মতবিনিময়সভায় যশোর সদর উপজেলা ও পৌর এলাকার ১৫টি ইউনিয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভার আগে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ কাজী নাবিল আহমেদ ও কাজী আনিস আহমেদকে ফুলের তোড়া দিয়ে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান।