ভোটের দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় কয়েকজনের মৃত্যুসহ নানা অনিয়মের খবর পাওয়া গেলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচন হয়েছে সংঘাতহীন।
রোববার ভোট শেষ হওয়ার আগে দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “বাংলাদেশের গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে, আমি বলতে পারি যে এবারের নির্বাচন সংঘাতহীন হয়েছে।”
কিছু জায়গায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও তা ‘অত্যন্ত নগণ্য’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নানক।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি এবারের নির্বাচন যে কোনো সময়ের চেয়ে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন হয়েছে।”
নির্বাচনী সহিংসতায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১০ জনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলে দাবি করেন তিনি।
“আমরা এটা অনেক আগে থেকে আশঙ্কা করেছিলাম যে বিএনপি-জামায়াত শেষ রক্ষার জন্য যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে পারে। আমরা এজন্য দেশবাসীকে বারবার সতর্ক করেছি। দেশবাসী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে তারা বড় ধরনের কোনো নাশকতা চালাতে পারেনি।”
নানক বলেন, “বিএনপি-জামায়াত নিশ্চিত পরাজয় জেনে ভোটের আগের রাত থেকেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
“সহিংসতা যা ঘটছে তার মধ্যে শুধু ১০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই নিহত হয়েছে, ৫৫ জন আহত হয়েছে, ছয়টি জায়গায় বোমা হামলা চালানো হয়েছে, ১০টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সাতজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আহত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি জেলায় সহিংসতার চিত্রও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, নোয়াখালী-২ আসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে, চাঁদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট হাসানের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ঢাকা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলাম, যাকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে, তার পক্ষে ভোট কেনার সময় ২৩ জন আটক হয়েছে। নেত্রকোণা-৪ আসনে ভোট কেনার সময় জেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আটক হয়েছে।
পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বর্জনের নাটক শুরু করেছে বলেও দাবি করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।
“তাদের অনেকেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ভয় থেকেই তারা ভোট বর্জনের খেলা শুরু করেছে।”
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নীতি হল নির্বাচনে জিতলে আছি, হারলে নাই। এখন পর্যন্ত বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে। সার্কভিত্তিক পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
“নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পুরনো কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। এখন ড. কামাল হোসেন নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের নামে জনগণের রায় ডাকাতি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, জনগণের ভোট ডাকাতির অধিকার কারও নেই। জনগণের রায়কে নিয়ে কাউকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দলটির আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম রব্বানী চিনু প্রমুখ।