এক বছরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন: প্রধানমন্ত্রী

আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ৯টি গ্রিড উপকেন্দ্র ও ১২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এক অন্যরকম ও উন্নত বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরতে সরকার কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত বাংলাদেশে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। এখন আর বিদ্যুতের জন্য গ্রাহকদের ঘুরতে হয় না। বরং সংযোগ পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকদের কাছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সব থেকে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে বিদ্যুৎ। আমরা মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এখন বিদ্যুতের উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালবো, এটাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলাম। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, স্বাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়, ফলে মানুষের মধ্যে একটি আশার আলো জেগেছিল। কিন্তু সেই আলো নিভে যায় বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা এটাই ছিল তাদের একমাত্র কাজ।

তিনি আরো বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের ফলে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করছি।

প্রসঙ্গত, নতুন ছয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৫৭ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট সিম্পল সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (সিসিপিপি) ও সিরাজগঞ্জে ২৮২ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট উদ্বোধন করা হয়। গ্যাসচালিত এ দুই কেন্দ্রের প্রথমটি নির্মাণ করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। দ্বিতীয় কেন্দ্রটি রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিপিজিসিএল) সঙ্গে যৌথভাবে স্থাপন করছে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি সেম্বকর্প।

বেসরকারি উদ্যোক্তাদের তেলচালিত চারটি কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ওরিয়ন পাওয়ারের খুলনার রূপসায় ১০০ মেগাওয়াট, দেশ এনার্জির চাঁদপুরে ২০০ মেগাওয়াট, মিডল্যান্ড পাওয়ারের আশুগঞ্জে ১৫০ মেগাওয়াট এবং একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের চট্টগ্রামের জুলদায় ১০০ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট।

প্রধানমন্ত্রী নতুন যে ১২ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেন সেগুলো হলো- ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু, ঠাকুরগাঁও সদর ও বালিয়াডাঙ্গী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও কালুখালী, বরগুনার বামনা, হবিগঞ্জের খালাই, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমেরীগঞ্জ ও বাহুবল এবং জামালপুরের মেলান্দহ ও ইসলামপুর। এর আগে সরকার ১৮৬টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করার ঘোষণা করেন।

দেশে প্রথম সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের বিদ্যুৎ সংযোগ শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর। আজ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে নির্মাণ করা ১২টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। ১৩২/৩৩ কিলোভোল্ট লেভেলের এ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ ও বরিশাল উত্তর, চট্টগ্রামের বারৈয়ারহাট, নীলফামারীর জলঢাকা ও সুনামগঞ্জ, সিলেটের বিয়ানীবাজার, রাঙামাটি এবং কক্সবাজারের মাতারবাড়ি। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্রও একই সময়ে উদ্বোধন করা হয়।