ফ্লাইং কারের প্রথম যাত্রী ফরাসি সংগীতের কিংবদন্তি

স্লোভাকিয়ার কোম্পানি ক্লেইনভিশনের ‘ফ্লাইং কার’ প্রথম যাত্রী হলেন ফরাসি সংগীত কিংবদন্তি জঁ-মিচেল জাঁ। আনকোরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে তার জুড়ি নেই। এ কারণেই স্লোভাকিয়ার পিস্ট্যানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রেকর্ড ভাঙা এ গাড়িতে দুটি উড্ডয়নের সুযোগ যে তিনি লুফে নেবেন সেটি একরকম নিশ্চিতই ছিল। আর তা-ই হয়েছে। এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।

প্রতিবেদনে লিখেছে- চোখ ধাঁধানো ‘লেজার শো’ জাঁর কনসার্টে একেবারেই সাধারণ বিষয়। এছাড়া ‘ইলেকট্রনিক’ ও ‘নিউ এজ’ গানেও তিনি একেবারে সামনের সারির শিল্পী। তিনি বলেন, এক মুহূর্ত আপনি চালকের সঙ্গে কথা বলছেন, পরের মুহূর্তেই বাতাসে ভাসছেন। এটা এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা!

গাড়িটি কয়েক মিনিটে স্পোর্টস কার থেকে প্লেনে রূপান্তরিত হতে পারে। ২০২১ সালে এটি আন্তঃনগর উড্ডয়ন শেষ করা প্রথম ফ্লাইং কার হয়ে ওঠে।

গাড়িটিতে একটি ১৬০০ সিসির ‘বিএমডাব্লিউ ইঞ্জিন’ রয়েছে। তবে স্টার্টআপ এভিয়েশন কোম্পানি ক্লেইনভিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্টন জাজ্যাক বলেছেন, প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একে ব্যাটারিচালিত করে ফেলব। আমরা রাস্তা ও আকাশের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনছি। গাড়িগুলোকে সেই স্বাধীনতা দিচ্ছি, যেমন এটি স্বাধীনতার প্রতীক হয়েছিল ৫০ বছর আগে।

আর এই স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য, কেবল চালকের লাইসেন্স ও পাইলটের লাইসেন্সই নয়, এয়ারকার নামের গাড়িটি চালানোর জন্য দুই থেকে তিন মাসের বিশেষ ফ্লাইং কোর্সেরও প্রয়োজন হবে৷ জাজ্যাক আশা প্রকাশ করেছেন এটি এক বছরের মধ্যে বাজারে আসবে। আর ফ্লাইটের জন্য এর অনুমোদন মিলেছে ২০২২ সালেই।

অধ্যাপক স্টেফান ক্লেইন ও জাজ্যাক মিলে স্লোভাকিয়ায় গাড়িটি তৈরি করেছিলেন। তবে এটিই একমাত্র ফ্লাইং কার নয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে স্কাই।

প্রথম ফ্লাইং কার হিসেবে রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পায় প্লেন নির্মাতা মার্কিন কোম্পানি আলেফ অ্যারোনটিক্সের আধুনিক নকশার ‘মডেল এ’ নামের গাড়িটি। ২০২২ সালে দেশটির ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের অনুমোদন পেয়েছে গাড়িটি। এরই মধ্যে গাড়িটির জন্য প্রায় তিন হাজার আগাম অর্ডার রয়েছে। আর ক্লেইনভিশনের গাড়ির বিপরীতে এ গাড়িটি বিদ্যুৎচালিত।

স্টার্ট-আপ এই কোম্পানিটিতে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের সমর্থন রয়েছে। আর আলেফ কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুসারে, গাড়িটি রাস্তায় চলতে পারে, প্রয়োজনে উলম্বভাবে ‘টেক অফ’ করতে পারে এবং অন্যান্য গাড়ির ওপরে উড়তেও পারে।

তবে একে ‘লো স্পিড ভিয়েকল’ বা কমগতির একটি যান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ঘণ্টায় এটি ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারবে না। পাশাপাশি এই গাড়ি ‘পাবলিক রোড’ বা জনপথে পরীক্ষা করার জন্য আলাদা অনুমোদনেরও প্রয়োজন হবে।

এদিকে মার্চ মাসে, ক্লেইনভিশন নিজেদের গাড়ির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করা প্রযুক্তির স্বত্ব ‘হেবেই জিয়ানঝিন ফ্লাইং কার টেকনোলজি কোম্পানি’ নামের এক চীনা কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছে দিয়েছে।

ফ্লাইং কার প্রযুক্তির খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। তবে ‘ইলেকট্রিক ভার্টিকাল টেক-অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং’ (ইভিটিওএল) যানবাহনের ওপরেই দেশটির বিশেষ নজর রয়েছে বলে লিখেছে স্কাই। পাশাপাশি, যুক্তরাজ্য সরকারও আশা প্রকাশ করেছে, তাদের ‘ফিউচার অফ ফ্লাইট অ্যাকশন প্ল্যান’-এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক ফ্লাইং ট্যাক্সি বাস্তবে পরিণত হবে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি আর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নয়। এটি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।