গত দুই দিন যাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান সংকটের আলোচনা উত্তাপ ছড়িয়েছে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর সেই পাইলট অভিনন্দন বর্তমান মুক্তি পেয়ে পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরলেন। সংবাদমাধ্যম টাইমস নাউ তার দেশে ফেরার খবর নিশ্চিত করেছে। সারা ভারত তার ভূমিকাকে বীরোচিত মনে করছে। যেখানে তাকে হস্তান্তর করার কথা ছিল, সেই ওয়াঘা সীমান্তে এখন মানুষের ভীড়। সংবাদমাধ্যমের নজরও এখন সেখানেই কেন্দ্রীভূত।
মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে। পরদিন বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত ও এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘উত্তেজনা নিরসনে ভূমিকা রাখলে আমরা ভারতীয় পাইলটকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত’। এরপর পাকিস্তান ঘোষণা দেয় যে শান্তির নিদর্শন হিসেবে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।
অসমর্থিত সূত্রে বিজনেস টুডে কিছুক্ষণ আগে তার লাহোরে পৌঁছানোর খবর দিয়েছিল। এবার সম্প্রচারমাধ্যম টাইমস নাউ জানালো, অভিনন্দন এখন ভারতের মাটিতে। তিনি সে দেশের কাস্টমস অফিসে রয়েছেন। অমৃতসর থেকে বিশেষ বিমানে করে তাকে দিল্লিতে নেওয়া হবে।
যেভানে অভিনন্দনকে বরণ করা হবে লাহোর থেকে সেই ওয়াঘা সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। সেই সীমান্ত এলাকায় অভিনন্দনকে বরণ করতে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষরাও যোগ দিয়েছেন এই আনন্দ উৎসবে। অভিনন্দন ফেরার আহ মুহূর্তে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ‘পুলওয়ামা হামলার পরবর্তী বিমান আক্রমণের ঘটনায় পাকিস্তান সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। এটা আমাদের কূটনীতির বিজয়। এতো অল্প সময়ের মধ্যে পাইলট অভিনন্দনকে ফিরিয়ে আনার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারাটা আমাদের কূটনৈতিক বিজয়’।
বুধবার ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি বিমান ভূপাতিত করার পাশাপাশি ভারতীয় পাইলটকে আটক করে তার ভিডিও প্রকাশ করে তারা। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৃহস্পতিবারের এক বিবৃতিতে ‘মানবিকতা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন আর জেনেভা কনভেনশন উপেক্ষা করে আহত সেনার কুরুচিপূর্ণ উপস্থাপন’র জোরালো নিন্দা জানানো হয়। আটক পাইলটকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়। একইদিনে (বৃহস্পতিবার) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘উত্তেজনা নিরসনে ভূমিকা রাখলে আমরা ভারতীয় পাইলটকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত’। কিছুক্ষণ পর পার্লামেন্টের এক যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানান, ‘শান্তির নিদর্শনের অংশ হিসেবে আমরা আটক ভারতীয় পাইলটকে আগামীকাল মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
অবশ্য ভারতের দাবি, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘনের ভয়ে পাকিস্তান আটক বিমান সেনাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।