প্রায় ৭৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার দেনা-পাওনাকে কেন্দ্র করে সরকারের তিন প্রতিষ্ঠান মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এগুলো হলো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড।
অর্থ আদায়ের জন্য এনবিআর টেলিটকের ব্যাংক হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর সেটি চিঠি দিয়ে টেলিটককে জানিয়েও দিয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড বিটিআরসির কাছ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে থ্রি-জি স্পেকট্রাম সেবা গ্রহণ করে। কিন্তু, তারা এ সেবার বিপরীতে আরোপিত মূসক/ভ্যাট বাবদ প্রায় ৭৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এনবিআরকে পরিশোধ করে না।
বিপুল অঙ্কের এই ভ্যাট পরিশোধ করতে এনবিআরের ভ্যাট এলটিইউ প্রথমে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে। এরপর টাকা পরিশোধে দু’বার টেলিটককে নোটিস দেয়। কিন্তু, এখন পর্যন্ত টেলিটক এনবিআরের এসব দাবিনামা ও নোটিসে কর্ণপাত করেনি।
এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে গত ৩ মার্চ টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চূড়ান্ত চিঠি পাঠায় ভ্যাট এলটিইউ।
চিঠিতে বলা হয়, ভ্যাট কর্তন ও জমাদানে ব্যর্থতার জন্য পণ্য/সেবা সরবরাহকারী এবং গ্রহণকারী উভয়ই সমানভাবে দায়ী। এ অবস্থায় থ্রি-জি স্পেকট্রাম সেবার বিপরীতে প্রযোজ্য মূসক বাবদ ৭৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অনতিবিলম্বে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য বলা হলো। অন্যথায় ব্যাংক হিসাব জব্দসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টেলিটক ছাড়াও বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান বরাবর চূড়ান্ত চিঠি দিয়েছে এনবিআর। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে থ্রি-জি স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা বিটিআরসি’র বকেয়া রয়েছে। এ বকেয়া পাওনার উপর এনবিআরের উৎসে মূসক/ভ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৭৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বিপুল পরিমাণ এ সরকারি রাজস্ব না আদায় করেই বিটিআরসি টেলিটককে সেবা অব্যাহত রেখেছে।
এ অবস্থায় টাকা আদায় ও পরিশোধে বিটিআরসি’র কাছে প্রায় ৭ দফা ও চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে এনবিআর। এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও টেলিটক উক্ত টাকা পরিশোধ করেনি। ফলে সম্প্রতি সরকারের এ রাজস্ব পরিশোধে যে তাগিদপত্র দেয়া হয়, তাতে এটিকেই শেষ ও চূড়ান্ত নোটিস বলে উল্লেখ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, এনবিআরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিআরসি ও টেলিটকের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, বিটিআরসি ও টেলিটক দুটিই সরকারি প্রতিষ্ঠান। এনবিআরও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মূলত উক্ত অর্থ টেলিটকের কাছ থেকে আদায় করে এনবিআরে জমা দেয়ার দায়িত্ব বিটিআরসি’র। কিন্তু, বারবার তাগাদা সত্ত্বেও না বিটিআরসি, না টেলিটক— কেউই এনবিআরকে কোনো সহায়তা করছে না।
তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় এনবিআর কঠিন হতে বাধ্য হয়েছে। বিটিআরসি ও টেলিটককে চূড়ান্তভাবে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে অর্থ আদায়ে টেলিটকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে বলেও তাদের সাফ জানানো হয়েছে।
এবারের সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করা হবে বলেও জানান এনবিআরের ওই কর্মকর্তা।