পেন্সিলে আঁকা খালেদার কারাজীবন

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন। তার সেই কারাজীবন নিয়ে পেন্সিলের আঁকা বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে ইন্দোনেশিয়ার গণমাধ্যম বেনার নিউজ।

খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তাতে বাধা দেয়। কারাগারে যাওয়ার পর ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার কোনো আলোকচিত্র কিংবা ছবি প্রকাশ করা হয়নি।

শারীরিক দুর্বলতার জন্য মাঝে মাঝে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন খালেদা জিয়া।

বেনার নিউজ দাবি করছে, বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে খালেদা জিয়ার কারাজীবন নিয়ে স্কেচ তৈরি করেছেন ইলাস্ট্রেটর রেবেল পেপার।

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন একাই আছেন খালেদা জিয়া। একসময় সেখানে কয়েক হাজার বন্দী ছিল। কারাগারে তার পাশের কক্ষেই থাকেন তার ব্যক্তিগত পরিচারিকা ফাতেমা।

২০১৮ সালে তারা পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। এর বছর দুয়েক আগে ২০১৬ সালে সেটি খালি করে বন্দীদের একটি নতুন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কারাগারে প্রশাসনিক ভবনের প্রথম ফ্লোরেই খালেদা জিয়ার থাকার জায়গা। তিনি ১০ ফুট লম্বা ও আট ফুট চওড়া একটি কক্ষে থাকেন।

কারাগারটি একজন সাবেক উপপরিদর্শক বেনার নিউজকে বলেন, সেখানে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে একটি টেবিল, দুটি চেয়ার দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া একটি গ্লাস, পিরিচ, চিরুনি, টুথব্রাশ, টুথপ্লেট, সাবান ও শ্যাম্পুসহ অন্যান্য জিনিসও রয়েছে তার জন্য।

২০১৮ সালের জুনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে খুবই নোংরা পরিবেশে রাখা হয়েছে। পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারটি পরিত্যক্ত। এতে বড় বড় ইঁদুর থাকে।

ফখরুল বলেন, আপনারা শুনে অবাক হবেন, খালেদা জিয়া যে কক্ষে থাকেন, সেই কক্ষটিতে একটি বিড়াল ইঁদুর শিকার করেছে।

কোনো কোনো বিরোধী নেতা অভিযোগ করেন, কক্ষটিতে পোকামাকড়ের উপদ্রব রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘তারা ডাহা মিথ্যা বলছেন। খালেদা জিয়াকে বিশেষ বন্দীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তাকে খাট, বিছানা, বালিশ, ফ্রিজসহ অন্যান্য আসবাবপত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে কীটপতঙ্গের উপদ্রব কেমনে হয়? কক্ষটি খুবই পরিচ্ছন্ন।’

খালেদা জিয়ার বন্দিত্ব নিয়ে বিএনপির নেতারা রাজনীতি করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি কারাকর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।

প্রতিদিনের রুটিন অনুসারে খালেদা জিয়া ফল দিয়ে সকালের নাস্তা করেন এবং পত্রিকা পড়েন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঘুম থেকে ওঠার পর তাকে স্বাভাবিক সুপ দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারাকর্মকর্তা বেনার নিউজকে বলেন, ‘তিনি পেঁপে ও অন্যান্য ফলের জুস পছন্দ করেন। আমাদের দেয়া ফল তিনি খাচ্ছেন।’

খালেদা জিয়াকে তার পছন্দ অনুসারে একটি পত্রিকা দেয়া হয়। এ ছাড়া কারাকক্ষে তাকে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন দেখার সুযোগ দেয়া হয়।

সরকার কারাগারের ভেতর বিশেষ জজ আদালত বসিয়েছে। যেটা তার কক্ষ থেকে খুব দূরে নয়। সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলার শুনানির সময় তাকে আনা হয়।

হুইল চেয়ারে বসে তিনি যখন আদালতে যান, তখন দুই নারী পুলিশ থাকে তার সঙ্গে। মাঝে মাঝে তিনি শুনানিতে আসতে অস্বীকার করেন।

গত ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় তাকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন- খালেদা জিয়ার অসুস্থতা সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার মতো নয়। কাজেই স্বাস্থ্যের জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করেই তাকে বেঁচে থাকতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার আর্থ্রাইটিস ও হাঁটুতে সমস্যা আছে। তার পেশি সক্রিয় রাখতে আমরা দুজন ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগ দিয়েছি। প্রতিদিন তাকে থেরাপি দেয়া হয়।

‘এ ছাড়া তার মেডিকেল চেকআপের জন্য একজন নারী চিকিৎসক রয়েছেন। চিকিৎসক তার রক্তচাপ, রক্তের শর্করার রেকর্ড রাখেন।’