ঈদের আগেই পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের সুপারিশ

পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ঈদের আগেই পরিশোধ করার জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, “আমরা বলেছি, ঈদের আগেই শ্রমিকদের ন্যায্য পরিশোধ করতে হবে। তবে শ্রমিকরা যাতে তাদের টাকা পায় সেজন্য ব্যাংক হিসাবে তাদের বকেয়া পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।”

ঈদের আগে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবশ্যই করতে হবে। সরকারকেই টাকা দিতে হবে।”

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে ২৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রয়েছে। এতে প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা বকেয়া থাকায় নয় দফা দাবিতে লাগাতার ধর্মঘট করছেন তারা।

গত ৬ মে থেকে দ্বিতীয় দফায় দেশব্যাপী একযোগে ধর্মঘটের ফলে মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।

শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ এর সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া টাকা প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ, মৌসুমের সময় পাট কিনতে অর্থ বরাদ্দ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, “পাটকলগুলোতে যেসব অস্থায়ী শ্রমিক আছে তাদের বিভিন্ন সময় ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় তারা তাদের মজুরিও ঠিক মতো পায় না। এ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য কমিটিতে আলোচনা হয়েছে।”

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বিজেএমসিতে বিদ্যমান শ্রমিক অসন্তোষের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করা হয়।

শ্রমিকদের মূল দাবি বকেয়া মজুরি পরিশোধ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়ের মাধ্যমে সমস্যা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।

কমিটির সভাপতি মির্জা আজম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দ্রুত পাওনা পরিশোধ করতে বলেছি। একইসঙ্গে কোনো ভুয়া শ্রমিক যাতে বেতন না পায় সেজন্য ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাটপণ্য বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জেডিপিসি কর্তৃক ঢাকা, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে সাতটি বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্র (জেইএসসি) স্থাপন করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।

এ পর্যন্ত জেডিপিসির উদ্যোক্তারা প্রায় ২৮০ ধরনের পাটজাত পণ্য উৎপাদন এবং তা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করেছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। বহুমুখী পাটপণ্যের বাজার সম্প্রসারণে কাঁচামালের উচ্চমূল্য হ্রাস ও সহজপ্রাপ্তির জন্য কম্পোজিট (স্পেশালাইজড) জুট মিল স্থাপন, বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন উন্নয়নে ডিজাইন সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন, দেশে ও বিদেশে প্রদর্শনী এবং বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনসহ নানাবিধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

বৈঠকে পাটজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় পাটপণ্য মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।

মির্জা আজমের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ইসরাফিল আলম, রনজিত কুমার রায়, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, খাদিজাতুল আনোয়ার ও তামান্না নুসরাত (বুবলী) বৈঠকে অংশ নেন।