শেষ মুহূর্তের অনুশীলনে ব্যস্ত টাইগাররা

ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের পর বিশ্বকাপে অংশ নিতে ইংল্যান্ড চলে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। লেস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে টাইগাররা এখন শেষ মুহূর্তের অনুশীলনে ব্যস্ত। সেখানে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ঘাম ঝরাচ্ছেন সাকিব-মুশফিক-রিয়াদরা। সোমবার সেন্টার উইকেটে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং অনুশীলন করেন দলের তিন সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অন্যদিকে, বোলিংয়ে নিজেদের ঝালিয়ে নেন রুবেল-মোস্তাফিজরা। এদিকে তরুণ ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিথুনরাও আলাদা নেটে অনুশীলন করেন।

অনুশীলনের সময় বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘ছেলেরা চেষ্টা করছে। সবাই কঠোর পরিশ্রম করছে। আমি মনে করি, ম্যাচের সময় ছেলেদের প্রচুর এনার্জি থাকতে হবে। এই বিষয়ের উপরই আমরা জোর দিচ্ছি। সবাই প্রতিযোগিতাপূর্ণভাবে অনুশীলন করছে। আপনার হাতে যখন বল থাকবে তখন উইকেট নেয়ার চেষ্টা করবেন, যখন ব্যাট থাকবে রান করবেন, মজা করবেন। এমনকি অনুশীলনের সময় কোচরা আমাদের উইকেট উদযাপন করে।’

ত্রিদেশীয় সিরিজে তরুণ ক্রিকেটারদের দুর্দান্ত পারফরমান্সের ব্যাপারে ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞরা যেভাবে পারফর্ম করেছে সেটা আমি খুব পছন্দ করি। বিশেষ করে ব্যাটিং। এটা খুবই কঠিন। আপনাকে সমর্থন পেতে হবে, সুযোগ পেতে হবে। তাছাড়া ভাগ্যেরও একটা বিষয় আছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মোসাদ্দেকের পারফরম্যান্সের দিকে খেয়াল করুন। সে একজন কোয়ালিটি প্লেয়ার। আমাদের সেট-আপে তার মতো খেলোয়াড় কম আছে।’

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে আগামী ৩০ মে বিশ্বকাপ শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ জুলাই। মূল আসর শুরুর আগে কার্ডিফে আগামী ২৬ মে পাকিস্তানের বিপক্ষে ও ২৮ মে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। বিশ^কাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২ জুন। এদিন দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে টাইগাররা।

ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো বহুজাতিক কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। গত ১৭ মে ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বৃষ্টি আইনে ৫ উইকেটে পরাজিত করে মাশরাফি বাহিনী। শিরোপা জয়ের পর বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে অংশ নিতে ইংল্যান্ডে চলে গেছে।

মূলত বিশ^কাপের প্রস্তুতি হিসাবে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশ নিয়েছে টাইগাররা। মূলত কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া ও বিশ^কাপ খেলতে নামার আগে শেষবারের মতো খেলোয়াড়রা যাতে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারে সেই লক্ষ্যেই এই সিরিজে অংশ নেয় বাংলাদেশ দল।

বলতে হবে টাইগারদের উদ্দেশ্যে সফল বাংলাদেশ। কারণ সিরিজে মাশরাফিরা ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং যেভাবে নিজেদের মেলে ধরেছেন তা অসাধারণ। সিরিজে দলের সব খেলোয়াড়ই ছন্দে ছিলেন। বিশ^কাপের আগে দলের এমন পারফরম্যান্স আশাব্যঞ্জক। এই সিরিজে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ইতিবাচক দিক ছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সিনিয়র খেলোয়াড়দের বাইরে জুনিয়র খেলোয়াড়দের ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স।

ফাইনাল ম্যাচটি জেতান সৌম্য সরকার ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ওপেনার সৌম্য শুরু থেকে ঝড় তুলে ৪১ বলে ৬৬ রান করে দলের শক্ত ভিত গড়ে দিয়ে যান। শেষদিকে ২৭ বলে ৫২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে জয়ে পৌঁছে দেন মোসাদ্দেক। শেষদিক এক ওভার থেকে ২৫ রান নেন মোসাদ্দেক। তরুণ মোসাদ্দেক একজন অভিজ্ঞ ফিনিশারের ভূমিকা পালন করেন। অসংখ্য ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ের কাছে গিয়েও দক্ষ ফিনিশারের অভাবে ম্যাচ হেরে গেছে। কিন্তু মোসাদ্দেক যেভাবে ম্যাচ জেতান তা দলকে আশান্বিত করে তোলে।

আরেকটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের রানে ফেরা। এই সিরিজে প্রতিটি ম্যাচেই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ জিতিয়েছেন। ওপেনিংয়ে তামিম-সৌম্যও জুটি ছিল অসাধারণ। আবার এক ম্যাচে সুযোগ পেয়ে লিটন দাসও নজরকাড়া ব্যাটিং করেছেন। পেসাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছে। স্পিনাররা যে খারাপ করেছেন তা নয়। সাকিব-মিরাজ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি কম রান দিয়েছেন। লিগ পর্বের ম্যাচে পেসার আবু জায়েদ রাহির পাঁচ উইকেট শিকারও দলের জন্য ভালো দিক।