রেলের টিকেটের জন্য যুদ্ধ, স্টেশনে স্টেশনে নির্ঘুম রাত

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ঘরমুখো মানুষের পরিবহনের জন্য রেলের আগাম টিকেট বিক্রি আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম দিন দেওয়া হচ্ছে ৩১ মের টিকেট।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেলের এই অগ্রিম টিকেট বিক্রি বুধবার থেকে শুরু হয়ে ২৬ মে পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই টিকেট বিক্রি করা হবে।

এবারই প্রথম অগ্রিম টিকেট ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর, বনানী, তেজগাঁও স্টেশন এবং ফুলবাড়িয়া থেকে বিক্রি করা হবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

আজ সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবছরের তুলনায় এবার এখানে ভিড় তুলনামূলকভাবে একটু কম। কারণ হিসেবে টিকেট পেতে আগ্রহীরা জানান, এবার রাজধানীর পাঁচটি স্থানে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়ায় কমলাপুরে ভিড় একটু কম। অনেকেই জানান, তাঁরা গতকাল ইফতারির পর থেকেই লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। সারা রাত রেলওয়ে স্টেশনেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সেহরিও এখানেই করেছেন।

গরমের মধ্যেও লোকজন কমলাপুরের আটটি কাউন্টারের সামনে ভিড় করেছেন। নারীদের জন্য আলাদা একটি কাউন্টার রয়েছে। যাত্রীরা কাউন্টার বাড়ানোর কথা বলেছেন। এ ছাড়া প্রতিবছর সকাল ৮টা থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হলেও এবার টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে সকাল ৯টা থেকে। যাত্রীদের দাবি, টিকেট বিক্রির সময় আরো এগিয়ে আনা উচিত।

এবার মোট ৭০ হাজার টিকেট বিক্রি হবে বলে জানানো হয়েছে। এর অর্ধেক বিক্রি হবে অনলাইন ও অ্যাপে। বাকি অর্ধেক রাজধানীর পাঁচটি জায়গা থেকে বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ভিআইপি কোটা ৫ শতাংশ এবং রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট ২৮ হাজার টিকেট স্টেশন থেকে সরাসরি বিক্রি করা হবে।

ঈদুল ফিতরের অগ্রিম টিকেট বিক্রয় ও ব্যবস্থাপনায় টিকেট বিক্রয়ের রুটগুলো হচ্ছে : ঢাকা (কমলাপুর)-সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেন ভায়া যমুনা সেতু, বিমানবন্দর স্টেশন-চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেন, তেজগাঁও স্টেশন-ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী সব আন্তনগর ট্রেন, বনানী স্টেশন-নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেন, ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলভবন)-সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তনগর ট্রেন।

রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গত বৃহস্পতিবার রেল ভবনে ঈদুল পবিত্র ফিতর উপলক্ষে রেলওয়ের প্রস্তুতি সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ বা ৬ জুন দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে। তবে আগামী ৫ জুন ঈদ ধরে রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।’

২২ মে দেওয়া হচ্ছে ৩১ মের টিকেট, ২৩ মে দেওয়া হবে ১ জুনের, ২৪ মে দেওয়া হবে ২ জুনের, ২৫ মে দেওয়া হবে ৩ জুনের এবং ২৬ মে দেওয়া হবে ৪ জুনের টিকেট।

রেলের ফিরতি টিকেট বিক্রি ২৯ মে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত চলবে। ২৯ মে দেওয়া হবে ৭ জুনের, ৩০ মে দেওয়া হবে ৮ জুনের, ৩১ মে দেওয়া হবে ৯ জুনের, ১ জুন দেওয়া হবে ১০ জুনের এবং ২ জুন দেওয়া হবে ১১ জুনের ফিরতি টিকেট।

এ ছাড়া অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকেট বিক্রি করা হবে। তবে স্পেশাল ট্রেনের কোনো সিট মোবাইল অ্যাপে পাওয়া যাবে না। ঈদের পাঁচ দিন আগে ৩১ মে থেকে রেলওয়েতে ট্রেনের কোনো ডে-অফ থাকবে না। ফলে ৪৮টি বিশেষ ট্রিপ পরিচালিত হবে।

টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঢাকা, ঢাকা বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র‍্যাবের সহযোগিতায় টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা থাকবে।

টিকেট কালোবাজারি রুখতে ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখিয়ে একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারবেন। ঈদের আগে ও পরে মালবাহী ট্রেন বন্ধ থাকবে।

রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বুধবার সকাল ১০টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টিকেট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।