যশোর কিংস হাসপাতালে এক প্রসূতির সিজার করার সময় গর্ভের সন্তানের মাথা কেটে ফেলার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডাঃ দিলীপ কুমার রায়ের নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, ভুল অস্ত্রোপচারের ঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে সোমবার ১৫ (জুলাই) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ ইমদাদুল হক রাজুকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন যশোর মেডিকেল কলেজের শিশু সার্জন ডাঃ আনসার উদ্দিন ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট (জুনিয়র) ডাঃ সঞ্চিতা অধিকারি মিষ্টি। কমিটিকে আগামি সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১০ জুলাই বুধবার সন্ধ্যায় যশোর সদরের সতীঘাটা পান্থাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইকরাম হোসেনের গর্ভবতী স্ত্রী নাজনীন নাহার ভর্তি হন ডা: আতিকুর রহমানের মালিকানাধীন কিংস হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনে তিনশ গজের মধ্যে হাসপাতালটির অবস্থান।
‘ভর্তির পরপরই কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ডা: আতিকুর রহমান তাঁর স্ত্রীর অপারেশন করেন। অপারেশন করার সময় গর্ভে থাকা শিশুটির মাথায় অপারেশন কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রের পোঁচ লাগে। মাথার তালুতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়।’ প্রসূতির স্বজনরা ভুমিষ্ট শিশুর মাথায় রক্ত দেখে একটু উত্তেজিত হয়ে উঠলে, ডা: আতিক তাদের ধমক দিয়ে বলেন, এটা কিছু না, সামান্য ব্যাপার। নখের আচঁড়। ওই অবস্থায় দুইদিন তার হাসপাতালে রেখে দেন শিশুটিকে। আলাদা কোন চিকিৎসা দেয়া বা বিষেশজ্ঞ কোন ডাক্তার দেখানো হয়নি।
শিশুটির পিতা জানান, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত থেকে শিশুটি নিস্তেজ হয়ে খাওয়া ছেড়ে দিলে তারা উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়ে। তখনও কিংস হাসপাতাল কতৃপক্ষ এই শিশুটি চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালে কিংস কতৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে শিশুটি ও তার মাকে ডিসচার্জ করে দেবার চেষ্টা করে। শিশুটি পিতা কোন উপায়ন্ত না পেয়ে শিশুর অবস্থা অবনতি হওয়ায় শুক্রবার সকাল ১০টায় তাকে যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক কাজল মল্লিক জানান, শিশুটির মাথা কাটা রয়েছে। কি কারণে কাটা হয়েছে, তা জানি না।
এ ব্যাপারে ডা: আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এটা তেমন কোন বড় ঘটনা না। এটা অপারেশনের সময় হতেই পারে।
প্রসঙ্গত: ডা: আতিকুর রহমান গাইনী বিশেষজ্ঞ নন। তিনি ছিলেন যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালের একজন মেডিকেল অফিসার।
এর আগে এই কিংস হাসপাতালেই ১লা জুলাই ডাক্তার সাদিয়া শাহিন পাইলসের অপারেশন করতে যেয়ে সদর উপজেলা কাশিমপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী সায়রা বেগমের জরায়ু কেটে বাদ দেয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি সিভিল সার্জন ডাঃ দিলীপ কুমার রায়ের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এ তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. হারুন অর রশিদ। অন্য দুই সদস্য হলেন যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক ও গাইনী কনসালটেন্ট ডা. রেবেকা সুলতানা।
গত ১০ জুলাই জমা দেয়া রিপোর্টে ডাঃ সাদিয়া শাহিনকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে ডাঃ সাদিয়া শাহিনের আচরন গত ক্রটি ছিল। অপারেশনে কোন ত্রুটি ছিল না। কারণ রোগীর কোন পাইলসই ছিল না। এছাড়া তিনি রোগীদের সঠিক ভাবে কাউন্সিলিং করতে পারেননি।