ডাক্তারদের অবহেলায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে অপারেশনের টেবিলে প্রসূতীর মৃত্যু

jessore hospital

সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বহীনতার কারণে যশোর জেনারেল হাসপাতালের অপারেশনের টেবিলে প্রসূতী মাসহ গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু বলেন, সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও চিকিৎসকরা রোগীকে বাঁচাতে পারেননি।

মৃত প্রসূতী পারভীনা বেগম(৩২) যশোর সদর উপজেলার ডহের পাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের স্ত্রী।

মৃতের স্বামী আব্দুল মজিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠে। তখন স্বজনরা আটটা দিকে তাকে হাসপাতালের প্রসূতী বিভাগে ইউনিট-১ এ ভর্তি করেন। তার ভর্তি রেজিষ্টার নাম্বার ২৩৪১৬১/১৯। এ সময় ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের চিকিৎসক উপস্থিত না থাকায় ইন্টার্ণী চিকিৎসক সেবিকাদের সহযোগীতায় রোগীকে চেক আপ করে প্রি-একলামসিয়া ধরা পড়ে। বিষয়টি মোবাইলফোনে ইন্টার্ণী চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসককে জানান। তখন চিকিৎসক মোবাইলে রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে নরমালে ট্রায় করতে বলেন। না হলে অপারেশন করবেন। এর মধ্যে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে চিকিৎসক মোবাইল ফোনে অপারেশন করার জন্য ওটিতে নিতে বলেন। ওয়ার্ডের আয়া রোগীকে ১০টার কিছু আগে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। সেখানে ওটির সেবিকারা রোগীকে অপারেশনের জন্য তৈরী করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইউনিটের চিকিৎসক না আসায় ১১টর কিছু পরে উচ্চ রক্তাচাপের খিচুনিতে রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীর মৃত্যু পরেও চিকিৎসক ওটিতে না থাকায় তাৎক্ষণীক অপারেশন করে গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

পরে বিষয়টি জানা যানি হলে, সংশ্লিষ্ট ইউনিটের চিকিৎসকরা অপারেশন রুমে গিয়ে এক ঘন্টা পিছিয়ে ১০টা ২০ মিনিটে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে ওটি ইনচার্জ সাবিনা ইয়াসমিন জানান, গাইনী ইউনিট-১ এর কোন চিকিৎসক ওটিতে ছিলেন না। ইউনিট-২ চিকিৎসকরা ওটিতে তাদের ইউনিটের রোগীদের সিজার করছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গাইনী চিকিৎসক বলেন, প্রি-একলামসিয়া নিয়ে রোগী ভর্তি হলে তাকে দ্রুত সিজারীয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসাব করাতে হয়। কিন্তু এই রোগীর ক্ষেত্রে প্রথমে নরমালে বাঁচ্চ বের করতে ট্রেয় করা হয়েছে। পরে খারাপ হলে অপারেশনের জন্য নেয়া হলেও চিকিৎসক অপারেশন করতে দেরি করায় রোগীর পেসার বেড়ে গিয়ে খিচুনি উঠে রোগীর মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, এ সময় যদি চিকিৎসক মৃতের পেট কেটে বাচ্চা বের করলে গর্ভের সন্তানকে বাচানো সম্ভব হত বলে তিনি জানান।

এদিকে অভিযোগ আছে গাইনী ইউনিটের চিকিৎসকরা সঠিক ভাবে তাদের ডিউটি পালন করেন না। ইন্টার্ণী চিকিৎসকরা এই ইউনিটের ভরসা।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু বলেন, রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের চিকিৎসকরা নিয়ম মেনে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। এখানে কোন ভুল বা দায়িত্বহীনতার ঘটনা ঘটেনি।