‘ডেঙ্গু নিয়ে দুই মেয়রের বক্তব্য বিস্ময়কর’

high-court

‘সরকার দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট বৃদ্ধি করেছে। সেই বাজেটের টাকা কোথায় যায়? ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করতে আর দেরি নেই, তারপরও দুই সিটির মেয়র কীভাবে বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, এটা বিস্ময়কর!’

জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানিকালে বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিস্ময় প্রকাশ করেন।

আদালত বলেন, ‘এর আগে এ মামলার শুনানিতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলেছিলাম যে, সামনে বর্ষা মৌসুম। মশা নিধনে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করুন। যাতে এটা মহামারির আকার ধারণ না করতে পারে। কিন্তু এখন প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে দেখছি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েইে চলেছে। সরকার অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে কিন্তু সেটার যথাযথ বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার, অবশ্যই সিটি করপোরেশনের।’

এরপর ৩০ আগস্টের মধ্যে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আমদানি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।

এ ছাড়া মশা নিধনে কার্যককর ওষুধ আনা এবং তা ছিটানোর জন্য অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রয়োজনে সরকারের সহায়তা নিতে হবে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নুরুন্নাহার নূপুর। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

আদেশের পরে মনজিল মোরসেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থা নিচ্ছে সেটা অকার্যকর। মিডিয়ায় রিপোর্ট এসেছে এই যে ওষুধগুলো দেওয়া হচ্ছে, সে ওষুধগুলোর মধ্যে কার্যকারিতা নেই। তারপরও ওই ওষুধগুলো তারা দিচ্ছে। এখানে ২০/২২ কোটি টাকার অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে। এগুলো চলেই যাচ্ছে। এগুলো দুর্নীতির মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে। যারা এ কাজগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরশেন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আরেকটা রিপোর্টে সিটি করপোরেশন বলছে-নতুন ওষুধ এনে কার্যকরী করতে ছয় মাস লাগবে। আমি বলেছি জনগণের প্রয়োজনে টেন্ডার এবং আইন কানুনের গিয়ে বাইরে গিয়ে দ্রুত ওষুধগুলো এনে ব্যবহার করে জনগণের জীবন রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।’

মনজিল মোরসেদ আরো বলেন, ‘এরপর আদালত দুটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এক. ওই অকার্যকর ওষুধ যারা এনেছেন, যারা সরবরাহ করেছেন এর সঙ্গে যারা জড়িত এটি একটি দুর্নীতি। সিটি করপোরেশন এ দুর্নীতি কমিটি গঠন করে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে। এ নির্দেশনা কার্যকর করে ২০ আগস্টের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে।

দুই. সিটি করপোরেশন যেটা চিন্তা করছে ভালো ওষুধ আনবে-সে ব্যাপারে বলেছেন এটা অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, সরকারের সহায়তা নিয়ে কার্যকর ওষুধ এনে তা ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’

এর আগে গত ২ জুলাই এ সংক্রান্ত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মশা নিধনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট আকারে অবহিত করতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এরপর দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আজ বুধবার দুটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

গত এপ্রিলে বায়ু দূষণ রোধে সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে হাইকোর্টে রিট করেন মনজিল মোরসেদ। ওই রিট আবেদনের রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় আদালতে সম্পূরক আবেদন দেন তিনি। ওই আবেদনে বলা হয়, ঢাকা মহানগরে মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিত তাহলে মশার উপদ্রব কমানো সম্ভব হতো।