‘প্রতিপক্ষের চোখ রাঙানিতে মিন্নির পরিবার’

বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে প্রধান সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে। তাকে বুধবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। রিমান্ডের বিরোধিতা করা তো দূরের কথা মিন্নি পক্ষে কোনো আইনজীবীই দাঁড়াননি আদালতে। আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেনের অভিযোগ, প্রতিপক্ষের ভয়ে আইনজীবীরা মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি। প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে রয়েছে তার পরিবার। তাদের ভয়ে কেউ মিন্নির পক্ষে মুখ খুলছেন না।

মিন্নির পক্ষে আদালতে আইনজীবী না থাকার বিষয়ে তার বাবা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি তিন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তাদের দাঁড়ানোর কথা ছিল, কিন্তু আমার মনে হয় প্রতিপক্ষের ভয়ে তারা আমার মেয়ের পক্ষে দাঁড়াননি।’

মিন্নির বাবা আরও বলেন, আমার মেয়েকে বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে আমার মেয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন, অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার নাসির ও অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদেরের দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু কী কারণে তারা দাঁড়াননি আমি বলতে পারব না। তবে ধারণা করছি, প্রতিপক্ষের ভয়ে হয়তো কোনো আইনজীবীরা দাঁড়াননি।’

কোন প্রতিপক্ষের কারণে আইনজীবী দাঁড়াননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন প্রতিপক্ষ সেটি আপনারাই বুঝে নিন। আমি বলতে গেলে বরগুনা থাকতে পারব না। এ ছাড়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সে কারণেই হয়তো সব কাগজপত্র প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি।’

এ বিষয়ে আইনজীবী জিয়াউদ্দিন জানান, মিন্নির বাবা তার কাছে আইনি সহায়তা চেয়েছেন, তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারেননি। তাই তিনি আদালতে দাঁড়াতে পারেননি। তবে তার কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেননি। মিন্নির বাবার দাবি, কী ধরনের কাগজপত্র লাগবে, তা তিনি জানেন না। তারা তাকে পরামর্শ দিলে সেভাবে কাজ করতেন।

মোজাম্মেল হোসেনের অভিযোগ নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছে তার পরিবার। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে মিন্নির ছোট দুই ভাইবোনের। মিন্নিকে গ্রেফতারের আগে তাদের বাড়িতে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছিল।

মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন যে, মেয়ের জামাইকে হত্যার পর তার বাড়ির আশপাশে ঘুরছে কিছু অপরিচিত মানুষ। পাশের বাড়িতে ঢুকে খোঁজখবর নিচ্ছে। ভয়ে তার দুই ছেলে ও মেয়েকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। রাতের আঁধারে কে বা কারা আমাকে কখন মেরে ফেলে সেই ভয়ে আছেন তিনি। মোজাম্মেলের দাবি, প্রভাবশালীদের চোখ রাঙানিতে তার পাশে কেউ নেই।

প্রসঙ্গত বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, চারজন রিমান্ডে আছে।