অবশেষে এক যুগ পর স্বামীর ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ পেতে যাচ্ছেন ফজিলা

অবশেষে এক যুগ পর স্বামীর ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ পেতে যাচ্ছেন ফজিলা বেগম। ২০০৭ সালে নিখোঁজ স্বামী আব্দুল হানিফ মোল্লার সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। স্বামী হারিয়ে অর্থকষ্টকে সঙ্গী করে খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে থেকেছেন। অবশেষে বুঝেছেন স্বামী আর বেঁচে নেই! তাই সন্তানদের মানুষ করতে স্বামীর পেনশন আর ব্যাংকের টাকা তুলতে ধর্ণা দেন ব্যাংকে আর স্বামীর কর্মস্থলে।

কিন্তু সবার চাওয়া ফজিলার স্বামীর ‘ডেথ সার্টিফিকেট’। একযুগ ধরে এই ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য ঘুরে বেড়ানো ফজিলাকে নিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন গণামাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসন তার পাশে এসে দাঁড়ায়। এরপর পাঁচ মাসের আইনি প্রক্রিয়ার পর রোববার আদালত ফজিলার স্বামীর ‘ডেথ ডিক্লিয়ারেশন’ ঘোষণা করলো।

যশোর শহরের রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে কোনরকমে মাথা গুঁজে বাস করেন ফজিলা। তার স্বামী আব্দুল হানিফ মোল্লা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ গ্রামের মৃত কাদের মোল্লার ছেলে। সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব চালাতেন। আর চার ছেলে মেয়ে নিয়ে যশোরে বসবাস করতেন ফজিলা।

২০০৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন আব্দুল হানিফ। এরপর আর তার কোনো সন্ধান মেলেনি। দু’দিন পর ট্যাক্সিক্যাবটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ঢাকার রাজমনি সিনেমা হলের পেছনে পাওয়া যায়। হানিফ মোল্লা নিখোঁজের ঘটনায় লিঙ্কস ক্যাব (বিডি)’র কর্মকর্তা ওবায়দুল হক ২০০৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কাফরুল থানায় একটি জিডি করেন। জিডি নং-১২৬৪, তাং-১৯.০২.০৭।

স্বামী হানিফ মোল্লা নিখোঁজের খবরে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে ফজিলার। তিনি ঢাকায় ছুটে যান। থানা-পুলিশ বহু জায়গায় ধর্না দেন। কিন্তু স্বামীর সন্ধান মেলেনি। একদিকে, স্বামী নেই, অন্যদিকে ছোট ছোট চারটি সন্তান। উপায়ান্ত না পেয়ে ছুটেছেন স্বামীর সর্বশেষ কর্মস্থলে। গেছেন খুলনার সোনালী ব্যাংক স্যার ইকবাল সড়ক শাখায়, যেখানে স্বামীর অবসর ভাতা গ্রহণের একাউন্ট। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। না পেয়েছেন স্বামীর সন্ধান, না পেরেছেন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে। সবাই চায় হানিফ মোল্লার ডেথ সার্টিফিকেট। ফলে এক যুগ ধরে চার সন্তান বুকে আগলে খেয়ে না খেয়ে অমানবিক জীবন যাপন করেছেন ফজিলা।

ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য ঘুরে বেড়ানো ফজিলাকে নিয়ে প্রথম গত ১০ ফেব্রুয়ারি’১৯ ‘জাগোনিউজে’ সংবাদ প্রকাশিত হয়। খবরটি প্রকাশের পর যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল অসহায় ফজিলার পাশে এসে দাঁড়ান। তাদের আর্থিক সহযোগিতাসহ যশোর সদর সহকারী জজ আদালতে মামলার ব্যবস্থা করে দেন। গত ২৫ মার্চ আব্দুল হানিফ মোল্লার ডেথ সার্টিফিকেট চেয়ে আদালতে মামলা হয়। রোববার সদর সহকারী জজ আদালতের বিচারক তরুণ বাছাড় আব্দুল হানিফ মোল্লা মৃত বলে ডিক্রি জারি করেন।

মামলার বাদী ফজিলা বেগমের আইনজীবী অ্যাড. আসাদুজ্জামান (আসাদ) বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে আদালত হানিফ মোল্লাকে মৃত বলে ঘোষণা করলেন। এখন এই ডিক্রির বুনিয়াদে বাদীকে ডেথ সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।

এই রায়ের পর ফজিলা বেগম বলেন, এক যুগ ধরে ধর্ণা দেয়ার পর অবেশেষে স্বামীর মৃত্যুর সার্টিফিকেট পাচ্ছেন। এজন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।