যশোরে ঘের ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা

যশোরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইমরুল হোসেন (৩০) নামে এক মৎস্যঘের ব্যবসায়ী খুন হয়েছে। অসামাজিক কাজে বাধা দেয়ায় দুর্বৃত্তরা ইমরুলকে গুলি করে হত্যা করে।

বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া-ডিগ্রি কলেজের ২শ গজ দক্ষিনে কালাবাঘা এলাকার একটি মৎস্য খামারে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ইমরুল ভাতুড়িয়া গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে ও চাঁচড়া এলাকার হক ফিসের মালিক মোস্তফা কামাল হত্যা মামলার প্রধান আসামি।

ইমরুলের চাচা ইউনুস জানায়, যশোর সদর উপজেলার হরিণার বিল সংলগ্ন ভাতুড়িয়া কালাবাঘায় ইমরুলের বড় একটি মাছের ঘের রয়েছে। ওই ঘেরে বুধবার সকালে চাঁচড়া এলাকার পান্নু বাহিনীর সন্ত্রাসী আলী, রিংকু, আকিদুল, স্বাধীন, মোস্তসহ ৭/৮জন সন্ত্রাসী ভ্রাম্যমান পতিতা নিয়ে যায়। ইমরুলের ছোট ভাই ইসরাজুল ইসলাম তাদের অসামাজিক কার্যকলাপে বাধা দেয়। এতে সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যায়।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ৪/৫টি মোটরসাইকেলে আলী, রিংকু, আকিদুল, স্বাধীন, মোস্তসহ ৭/৮জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ইমরুলের মাছের ঘেরে যেয়ে ইসরাজুলকে কোপাতে উদ্যত হয়। ছোট ভাই ইসরাজুলকে বাঁচাতে বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা পিছন থেকে ধারালো দাঁঁ দিয়ে ইমরুলকে কোপ মারে। ইমরুল পড়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি করে। গুলিটি বুকের বাম পাশে বিদ্ধ হলে ইমরুল মারা গেছে ভেবে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। ছোট ভাই ইসরাজুল স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুপুর একটার দিকে ইমরুলকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে।

নিহত ইমরুলের ছোট ভাই ইসরাজুল জানান, দুপুরে ফূর্তি করার জন্য এলাকায় পান্নু বাহিনীর ক্যাডার আলী, রিংকু, আকিদুল, স্বাধীন, মোস্ত একটি মেয়ে নিয়ে যায় মৎস্য ঘেরে। এসময় তিনি বাঁধা দেন। এক পর্যায়ে তার ভাই ইমরুল এগিয়ে গেলে তাকে গুলি করে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান লর্ড গুলিটি বের করতে না পারায় তাকে ঢাকায় রেফার করে। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ইমরুলকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিকেল পৌনে তিনটার দিকে সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান লর্ড ঘেরব্যবসায়ী ইমরুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইমরুলের স্বজন লিটন জানায়, মাস ছয়েক আগে ভাতুড়িয়া ডিগ্রি কলেজের এক অনুষ্ঠানে আলী, রিংকু, আকিদুল, স্বাধীন, মোস্ত, ভাতুড়িয়ার যুবলীগ নেতা কাজল তার ছোট ভাই মাফিজুল ও খোকন নামে তিনজনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে পান্নু বাহিনীর এই ক্যাডারা। এদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় হত্যা প্রচেষ্টা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিএনপির শাসনামলে এক বিএনপি নেতার ক্যাডার ছিল এই পান্নু। বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে পান্নু নিজেই একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে। বর্তমানে পান্নু শহরের পোষ্ট অফিস পাড়ার এক যুবলীগ নেতার ছত্রছায়ায় রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র বলেছে, সকালে মনিরামপুরের একটি ছেলের সাথে ভাতুড়িয়ার একটি মেয়ে কালাবাঘা এলাকায় স্বপনের মাছের ঘেরের সামনে বসে প্রেম করছিল। বিষয়টি দেখে নিহত ইমরুলের ছোট ভাই ইসরাজুল ও শান্ত নামে একজন ওই দুজনকে ধরে নিয়ে তাদের ঘেরে আটকে রাখে। আটক ছেলে-মেয়ে ভাতুড়িয়া এলাকায় তাদের বন্ধুদের ফোন দেয়। আটক ছেলে মেয়ের বন্ধুরা যেয়ে ইসরাজুলের কাছ থেকে তাদের ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে তারা মোস্তকে খবর দিলে মোস্ত সেখানে যায়। মোস্ত যাওয়ার পর ইমরুলও সেখানে যায়। এসময় মোস্তকে দেখে ইমরুল বলে ভাই আপনি এখানে বলার সাথে সাথে ইমরুলকে ধারালো দা দিয়ে দুটি কোপ দেয়া হয়। ইমরুল পড়ে গেলে মোস্তর কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে ইমরুলকে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি গুলি ইমরুলের বুকের বাম পার্শ্বে বিদ্ধ হয়। গুলি বিদ্ধ ইমরুলকে বেলা ১ টার দিকে ২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গুলি বের করা সম্ভব না হওয়ায় ঢাকায় রের্ফার করা হয়। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার আগেই বেলা তিনটার দিকে ইমরুল মারা যায়।

ইমরুল হত্যাকান্ডের পর ভাতুড়িয়ার পাশের গ্রাম নারায়নপুর গ্রামের বিক্ষুব্ধ কয়েকশ লোক চাঁচড়া দাড়ি পাড়ায় সেলিম রেজা পান্নুর বাড়ি ও বাড়ির সামনে রাখা একটি জীপ গাড়ি ভাংচুর করে। এসময় ঠেকাতে যেয়ে চাঁচড়া ফাড়ির এটি এস আই আনোয়ার হোসেন মাথা ফেটে আহত হন। পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে পান্নুর পরিবারকে হেফাজতে নিয়েছে।

হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক, কোতয়ালি থানার নবগত ওসি মনিরুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সমীর কুমার সরকার, হাসপাতালে আসেন। তারা নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলেন ও সন্ত্রাসীদের আটকের আশ্বাস দেন।

কোতয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান ইমরুল হত্যাকান্ড সম্পর্কে বলেন, আসামি ধরার জন্য অভিযান চলছে। শুনেছি মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইমরুলকে হত্যা করা হয়েছে। তবে প্রকৃত হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্তের পর নিশ্চিত করে বলা যাবে। এখনো মামলা হয়নি। মামলা হওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।