গত ৫ আগস্ট ৩৭০ ধারা বিলোপের পর উত্তাল হয়ে ওঠে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ায় এ উত্তেজনা বাড়ে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে জুম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে।
বিক্ষোভ বানচাল করতে বিপুল পরিমাণে সেনা মোতায়েন করে বহির্বিশ্ব থেকে কাশ্মীরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ভারত সরকার। ১৪৪ ধারা জারি করে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্রেফতার করা হয় কাশ্মীর বিষয়ে সোচ্চার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের।
দুই মাসব্যাপী টান টান উত্তেজনার পর স্বাভাবিক হতে চলেছে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরসহ অন্যান্য অঞ্চলগুলো। তবে কাশ্মীরের সব অঞ্চলের তুলনায় ব্যতিক্রম আনচার নামক এলাকা, যা রাজধানী শ্রীনগরেই অবস্থিত।
গত দুই মাসের কড়াকড়ি কিছুটা কমানো হলেও আনচার থেকে তা একদমই কমায়নি কেন্দ্রীয় প্রশাসন।
কেননা ভারতবিরোধী আন্দোলন ও বিক্ষোভে কাশ্মীরের অন্য এলাকাগুলোর তুলনায় অনেক বেশি উত্তাল থাকে এই আনচার। আনচারবাসীদের উত্তেজনাকে থামাতেও ব্যর্থ হয় প্রশাসন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অন্যসব অঞ্চলে ভারতীয় পুলিশ ঢুকে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলেও আনচারে তা করতে বরাবরই ব্যর্থ তারা। পুলিশ যাতে আনচারে ঢুকতে না পারে সে জন্য ওই এলাকার ভারতবিরোধী বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি, ইলেকট্রিক পোল ফেলে এবং কোথাও কোথাও কাঁটাতার দিয়ে নিজেদেরই অবরুদ্ধ করে রাখে।
এমনকি মূল সড়কের উল্লেখযোগ্য পয়েন্টে খনন করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে আনচারের তরুণরা।
এতে ভারতীয় পুলিশ আর সে অঞ্চলে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে না।
শুধু তাই নয়, তবুও যদি পুলিশ সক্ষম হয়ে যায় সেই ভাবনায় আনচারের বিভিন্ন পয়েন্টের গাছের ডালে অস্ত্র নিয়ে, কেউবা পাথর নিয়ে মুখোশ পরে সক্রিয় থাকে। সার্বক্ষণিক টহল দিতে থাকে বেশ কিছু তরুণ। আর তাদের খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে সেবা দিতে থাকে গ্রামবাসীরা।
রয়টার্স জানিয়েছে, ১৫ হাজারের মতো মানুষের বসবাস আনচারে। অঞ্চলটিতে ভারতীয় পুলিশ ঢুকে তেমন সুবিধা করতে পারেনি এর আগেও। তাই সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কাশ্মীর সংকটের সময় আনচারে অভিযান ও নজরদারি বাড়িয়ে দেয় ভারত সরকার।
সেই অভিযান ঠেকাতে মুখোশ পরে লাঠি, পাথর হাতে রাস্তায় নামে আনচারের যুবকরা। রাস্তা খুঁড়ে ও কাঁটাতার দিয়ে ভারতীয় পুলিশের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
এমন প্রতিবাদে অবশ্য তারা নিজেরাই বিপদে পড়েছেন। অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
রয়টার্স জানায়, আনচারে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকতে না পারায় সেখানে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সব ধরনের জরুরি সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেখানে।
দীর্ঘদিন ধরে আনচারের সরকারি বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয় চার কলেজছাত্র তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি বিদ্যালয় দিয়েছেন। যেখানে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে দুশতের বেশি শিক্ষার্থী লেখাপাড়া করে।
অসুস্থ হয়ে পড়া অনেককে শ্রীনগরের উন্নতর চিকিৎসা না দিয়ে গ্রামেই রেখে সেবা দেয়া হয়।
রয়টার্সকে রুবিনা নামে এক নারী জানান, সম্প্রতি জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে ভারতীয় সেনার বুলেটের আঘাতে তার ১৫ বছরের ছেলে আহত হয়েছে। এখন সে কথা বলতে পারছে না। তবু্ তাকে গ্রামের বাইরে বড় কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আনচার ছেড়ে কোথায় নিতে গেলে ৬-৭ জন পাহারা দিয়ে ছেলেকে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় ভারতীয় সেনার আমার ছেলেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।